ঢাকা জেলা প্রশাসক
পুঞ্জিভূত অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান

ঢাকা জেলার প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেছেন, পুঞ্জিভূত অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণই জুলাই গণঅভ্যুত্থান। এটা একটা শুধু ফ্যাসিস্ট দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বললে ভুল হবে।
তিনি বলেছেন, এ আন্দোলনে যেসব সন্তানেরা শহীদ হয়েছে, তাদের মায়েরা আন্দোলনে অংশ নিতে বাঁধা দেয়নি। কারণ মায়েদের মাথায় শুধু কোটা আন্দোলন বা কোটা সংস্কার ছিল না। বরং তাদের মাথায় ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
আজ শনিবার ঢাকা জেলা প্রশাসক আয়োজিত জুলাই গণঅভুত্থান ২০২৪ এর শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের শ্রদ্ধেয় মায়েদের অংশগ্রহণে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ ও মাদার্স অফ জুলাই শীর্ষক চলচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
তানভীর আহমেদ বলেন, জুলাই নিয়ে আমরা যত স্মৃতিচারণ করি কত কষ্ট বাড়বে। সেই গুলি, সেই রক্ত, সেই লাশ ভোলার নয়।
এই যে শোক, শহীদদের মায়েদের কান্না, এগুলো যদি ভালো কিছুতে কনভার্ট করতে না পারি আমরা এই জুলাই আন্দোলন সফল হবে না। ভালো কাজ করার চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। সামনের দিনগুলোতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য সফল করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা যখন জুলাই আন্দোলনে শহীদদের তালিকা নিয়ে কাজ করি, তখন অন্যান্য জেলা প্রশাসনের তুলনায় প্রশাসনের প্রতিটি আহত এবং যাচাই-বাছাই অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
এখনো আমাদের কাছেও বেশ কিছু আবেদন আছে যেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই করে একটা লম্বা কর্মযজ্ঞের পরে প্রথম ধাপের একটা তালিকা আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি। পরবর্তীতে আরো তালিকা প্রকাশ হবে। ডিলিট হওয়ার পরেও আমাদের কাছে অন্তত এক হাজারেরও বেশি আহতদের নাম জমা পড়েছে। খুব দ্রুতই আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করব। এবং সরকারের কাছে যাচাই বাছাই করে পাঠাব।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজিয়া সুলতানা ও সহকারী কমিশনার সাদিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফোয়ারা খাতুন স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে উপস্থিত কয়েকজন মা তাদের সন্তানদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
শহিদ রাজনের মা মাহমুদা খাতুন বলেন, আমি আমার ছেলেকে ছোট থেকে বড় করেছি। ওর বাবা ছিল না। ১৯ জুলাই জুমার নামাজ পড়ে দুধ-কলা ভাত খেয়ে চলে যায়। তখন আমাকে বলে, আম্মু, আমার ওপর কোনো দায়-দাবি রেখো না। মাগরিবের নামাজের আগে ফোনে কল আসে। জানানো হয়, রাজন আর এই জগতে নেই। পাখি শিকার করত গিয়ে, পাখির কাছেই আমার ছেলে ধরা পড়ে গেছে। এই জগতটা এতোই খারাপ, আমি কখনো ভাবিনি। আমার ছেলে আমাকে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে।
শহিদ মেহেদী হাসানের মা কুলসুমা আক্তার বলেন, ১৯ জুলাই মেহেদী বলে, আম্মু আমি বাইরে যাব। আমি যেতে বারণ করি। পরে অনুরোধ করে, আম্মু আমি যাই। আমি না করি। আমি না করে বলি, তুমি বাসায় থাকো। আমার কাছে সে ২০ টাকা চায়। আমি ওকে ১০০ টাকা দেই। তখন মেহেদী একটা হাসি দিছে। ওর সেই হাসিটা এখনো চোখে ভাসে। মেহেদী বলে সে যাবে না। পরে আমি ডিউটিতে চলে যাই। এরপর সে বের হয়ে যায়। আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তবে শহিদদের তালিকায় আমার ছেলের নাম উঠেনি। তার নামটা শহিদদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
এর আগে সকালে ঢাকার জেলার বিভিন্ন থানা থেকে শহিদ ও জুলাই যোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রাঙ্গণে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে অভিভাবক সমাবেশ শুরু হয়। জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত ৩৬ মিনিটের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।