ঢাকা শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


শরীয়তপুরে ছয় মাসেই উপহারের ঘরে ফাটল!


১০ জুলাই ২০২১ ১৯:৪১

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১৮:৪৯

মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণকাজে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সরেজমিন তদন্তে নেমেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচটি দল। তারা ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন।

গতকাল শুক্রবার সকালে তারা বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হয়। প্রথম দফায় দেশের জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ভাগ করে পরিদর্শন কাজ শুরু হয়েছে।

পরিদর্শনে যাওয়া একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই। গতকাল তার নেতৃত্বে দুটি দল মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘর পরিদর্শন করে। পরে দল দুটি আলাদা হয়ে যায়। তিনি জানান, পাঁচটি দল পর্যায়ক্রমে সব জেলায় যাবে বিশেষ করে যেসব এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠছে।

শরীয়তপুরে ছয় মাসেই উপহারের ঘরে ফাটল : শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ছয় মাস না পেরোতেই মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বেশকিছু ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঘরটির বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষখালী মৌজায় ২১টি পরিবারের জন্য তৈরি করা উপহারের অধিকাংশ ঘরেরই মেঝে, দেয়াল ও পিলারে ফাটল ধরেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয় উপকারভোগীদের মাঝে।

এদিকে হস্তান্তরের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ফাটল ধরায় উপহারের ওই ঘরগুলোতে বসবাসকারীরা দুর্ঘটনার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে ঘরগুলো মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২)-এর ‘ক’ তালিকার গৃহহীন-ভূমিহীন অসহায় পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গেল অর্থবছরে ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি মৌজায় ৬৭ শতাংশ জমির ওপর ২১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য সেমিপাকা ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। গেল অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ে নির্মিত এসব ঘর গত ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। সেমিপাকা দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব ঘরে একটি রান্নাঘর ও টয়লেট সংযুক্ত রয়েছে। কিন্তু ছয় মাস না পেরোতেই ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে পানি পড়ছে। ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা।

উপকারভোগীরা অভিযোগ করে  বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দেওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু ঘরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন ঠিকাদাররা। বৃষ্টি নামলেই অনেক ঘর দিয়ে পানি পড়ে। চালের কাঠ ভালো না, যে কারণে টিনের সঙ্গে লাগানো স্ক্রু গেছে ঢিলে হয়ে। বৃষ্টি নামলেই পানি পড়ে সারা ঘরে। ঘরগুলোর মেঝেও ফেটে গেছে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে। পিলারও ফাটা।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা শিরিনা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে, আমরা অনেক খুশি হইছি। এখন সামনের পিলার ও ফ্লোর ফেটে গেছে। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’ আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা সৈয়দননেসা বলেন, ‘ঘরের মেঝে ও বারান্দার মেঝেতে ফাটল ধরছে। সব ঘরের একই অবস্থা। কোনো কোনো পিলারও ফেটে গেছে। এ নিয়ে এখন আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’

অল্প সময়ে নতুন ঘরের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ আশ্রয়ণের বাসিন্দা লুৎফা বেগম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ঘরের রান্নাঘর ও টয়লেট ভেঙে থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই। চেয়ারম্যান সাহেব ও পিআইও ম্যাডাম এসে আমাকে অন্য ঘরে থাকতে দিয়ে গেছে। পরে আমার ঘর মেরামত করে দেবে বলেছে। এই ঘরে সিমেন্ট কম দিছে। নাইলে এভাবে বিল্ডিং ফাটতে পারে না। কয়দিন হইছে আমরা আসছি, এখনই এই অবস্থা। এই ঘরে কীভাবে থাকমু?’

গোসাইরহাট উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হুসাইন। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী।

অল্প সময়ে নতুন ঘরের বেহাল দশার কারণ জানতে চাইলে পিআইও তাহমিনা আক্তার চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই জায়গাটা সিলেকশন ভুল ছিল। এবার অতিবর্ষণের কারণে অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এরপরও আশ্রয়ণটি টিকিয়ে রাখতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বর্ষা মৌসুম শেষে সমস্যাগুলো সমাধান করে দেওয়া হবে।’

গোসাইরহাটের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তানভির আল নাসিফ  বলেছেন, ‘আমি সম্প্রতি ওই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। বিষয়টি জেনে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে অবগত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণকাজে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সরেজমিন তদন্তে নেমেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতকাল শুক্রবার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছে একটি দল। দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘর নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগ ওঠার পর পাঁচটি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবে বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন মাহবুব হোসেন।