ঢাকা মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


স্টার্ট আপে ‘স্টার্ট’ নেই


৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:১৪

আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৩৬

দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা ছিল চলতি অর্থবছরের বাজেটে। এজন্য ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা ‘স্টার্ট আপ ফান্ড’ নামে পরিচিত।

বাজেট বাস্তবায়ন শুরুর পর ছয় মাস চললেও ওই তহবিল থেকে কোনো উদ্ভাবনী উদ্যোগের (স্টার্ট আপ) জন্য কানাকড়িও ছাড় হয়নি। এই তহবিলের আশায় অনেক তরুণ নতুন ভাবনা নিয়ে বসে থাকলেও তা শুরু করতে পারছেন না তারা।

এই তহবিলের অর্থ কারা পাবেন, কীভাবে দেওয়া হবে–সে বিষয়ে নীতিমালা না হওয়ায় অর্থ ছাড় হচ্ছে না বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংও হয়ে গেছে।

এখন তা জারির অপেক্ষায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে রয়েছে। আর এই তহবিলের অর্থ পাবেন শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা।

দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য তরুণদের চাকরির বদলে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

যুবকদের সব ধরনের ব্যবসা উদ্যোগে সহায়তা করতে এই তহবিল থেকে অনুদান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে অর্থবছরের অর্ধেক সময় পার হতে চললেও নীতিমালার অভাবে তহবিল কাজে আসছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) মো. হাবিবুর রহমান গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো নীতিমালা জারি না হওয়ায় স্টার্ট আপ ফান্ডের অর্থছাড় হয়নি। এই তহবিল মূলত দেওয়া হবে আইসিটি খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের। আইসিটি বিভাগ এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে।

নীতিমালাটি জারি হলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের ১০০ কোটি টাকা আইসিটি বিভাগকে দেওয়া হবে। তারা এই তহবিলের টাকা তরুণ উদ্যোক্তাদের দেবে। তিনি বলেন, এর আগে কৃষি ও আইসিটি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে সমমূলধন উদ্যোক্তা তহবিল (ইইএফ) গঠন করা হয়েছিল।

সেখানে দেখা গেছে, গরু-মুরগির খামার ও মাছ উৎপাদন দেখিয়ে কৃষি খাতে অনেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু আইসিটি খাতে তেমন খরচ হয়নি। এখন বাংলাদেশে আইসিটি খাত বিকশিত হচ্ছে। তাই স্টার্ট আপ তহবিলের এই টাকা আইসিটি খাত সংশ্লিষ্ট নতুন উদ্যোগের জন্য দেওয়া হবে।

আইসিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স্টার্ট আপ তহবিলের টাকা নতুন উদ্যোক্তাদের দেওয়ার জন্য নীতিমালার খসড়া তৈরির পর তা চ‚ড়ান্ত করতে দুটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। পরে খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়েছে। এখন তা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে রয়েছে। সেখান থেকে নীতিমালাটি জারি হবে।

আইসিটি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ’ প্রকল্পের আওতায় নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীন এই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সৈয়দ মজিবুল হক গত বৃহস্পতিবার বলেন, আইসিটি খাতে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ, বৃত্তি ও উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য অনুদান দেওয়া সম্পর্কিত (সংশোধিত) নীতিমালার আদলে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটি শিগগিরই জারি হবে।

স্টার্ট আপ ফান্ড থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের অনুদান দেওয়া হবে। তাতে ছোট উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য সর্বোচ্চ ৫ লাখ, মধ্যম উদ্যোগের জন্য ৫-১০ লাখ ও বড় উদ্যোগের ক্ষেত্রে ১০-২০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও জনসেবায় অনন্য অবদান রাখতে পারবে এমন উদ্যোগের ক্ষেত্রে ও বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য বলে বিবেচিত হলে অনুদানের পরিমাণ বিশেষ ক্ষেত্রে দুই কিস্তিতে ২৫ লাখ টাকা এবং সাফল্য দেখাতে পারলে বিশেষ বিবেচনায় আরও ৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া যাবে। তবে এরূপ অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির বদলে প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হবে।