বেরোবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি
দাবি আদায়ে এখনও অনড়, পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশন টানা তৃতীয় দিনের মতো এখনো চলমান। এ ঘটনায় মোট ছয়জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দফায় দফায় মিটিং করে পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করলেও রোডম্যাপ নিয়েই ক্লাস পরীক্ষায় ফিরতে চান অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগের সাতজন শিক্ষার্থী অনশন করছেন। গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ১০ জন অনশনে ছিলেন। এর মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি; আর দুজন অনশন প্রত্যাহার করেন। এ নিয়ে হট্টগোল হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এর আগে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিবলি সাদিক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মুশফিকুর রহমান। তবে, বাকিরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিবলি সাদিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৩৬ ঘণ্টা থেকে আমরণ অনশন করছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডমাপের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবৃতি দিক। উপাচার্য বিবৃতি দিয়েছেন। ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়েছেন তিনি। আমি এটার সঙ্গে একমত। আমার শারীরিক পরিস্থিতিও খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ওয়াদা দিয়েছে, তার সঙ্গে একমত পোষণ করে আমি অনশন ভাঙছি।’
মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্যের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি এসেছে। এটা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। আশা করব, ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এটা বাস্তবায়ন করা হবে।’
এদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হকের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে বর্তমান প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত। ছাত্রদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বেরিয়ে আসুক, তারা নেতৃত্ব দিক; বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা বিশ্বাস করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ছাত্র সংসদের বিষয়টি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই। তবে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ একটি ব্যাংক হিসাব খুলে জমা রাখা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সেটা শুধু ছাত্র সংসদের জন্যই খরচ করা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য উপাচার্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্যরা চারটি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি) থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং তিনটি আবাসিক হলের জন্য আলাদা করে ছাত্র সংসদের জন্য একটি গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেছেন। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। গঠনতন্ত্রটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে গত ৩০ জুলাই গঠিত সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে যাচাই–বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী এ গঠনতন্ত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। তারপর সেটার আলোকে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার আগে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের এসব ধাপ পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে উপাচার্য একাধিকবার আলোচনা করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছেন, জরুরিভাবে উদ্যোগ নিয়ে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র যাচাই–বাছাই করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের অক্টোবর মাসের মধ্যেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিধিবিধান প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশ–সম্পর্কিত কাজটি যেহেতু দুই–এক দিনের মধ্যে করা সম্ভব নয়, তাই শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ১০ কার্যদিবস সময় চেয়েছেন।