চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পদ্মা-মহানন্দায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত, তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবাসহ প্রধান নদীগুলোতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে পদ্মা তীরবর্তী ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পানিবৃদ্ধি বন্ধ হতে পারে। অবস্থা আর খারাপ হবে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।
আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পদ্মায় পানি বিপৎসীমার মাত্র ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ২১.৭৩ মিটার সমতলে প্রবাহিত হচ্ছিল।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো পানি বাড়ার কারণে বসতবাড়ির চারদিক ও ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী হাজার হাজার পরিবার। তাদের অনেকে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে। গবাদি পশুও নাজেহাল।
সদরের নারায়ণপুর, আলাতুলী, ইসলামপুর, দেবীনগর, শাজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা, সুন্দরপুর অর্থাৎ সাতটি এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি অর্থাৎ দুর্লভপুর, পাকা, মনাকষা, উজিরপুর ও ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পদ্মার পানি প্রবেশ করে নিমজ্জিত, অর্ধনিমজ্জিত ও আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বাগান। পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গ্রামীণ সড়কে পানি ওঠায় মানুষের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনের পর জানিয়েছেন, দুই উপজেলায় পদ্মার পানিবৃদ্ধিজনিত কারণে অন্তত সাড়ে আট হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
পাঠদান বন্ধ রয়েছে অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানের চারদিকে পানি থাকলেও পাঠদান বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া আক্রান্ত সব ইউনিয়নে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মানুষ পানিবন্দি হয়নি।
পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, ‘উজানে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানি ও বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বাড়ছে। ভারতে গঙ্গার সব পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে আশা করা হচ্ছে পানি আর তেমন বাড়বে না। স্থির হয়ে কমতে শুরু করবে। এর পরও সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় মহানন্দায় বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচে ১৯.৭৫ মিটার এবং পুনর্ভবায় বিপৎসীমার ১.৬৬ মিটার নিচ দিয়ে ১৯.৮৯ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল। অর্থাৎ জেলার সব বড় নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এখনো বন্যার পূর্বাভাস দেয়নি বলেও জানান প্রকৌশলী আহসান।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দুই উপজেলায় প্রায় চার হাজার বিঘা ফসলিজমি পদ্মার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদ্প্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াসিন আলী বলেন, আক্রান্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, ভুট্টা, সবজি, হলুদ, কলা ইত্যাদি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সব ইউনিয়নের সার্বিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি। অন্তত ১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ। বুধবার ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। ফসলি জমিতে পানি ওঠায় কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত।’
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাহার আলী বলেন, ‘অন্তত সাড়ে সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি। অন্তত ৪৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়নের। তবে পানি আর বেশি না বাড়ার আভাস পাওয়া গেছে। ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। এখনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্র চালু করতে হয়নি।’