রাজশাহীতে বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ, স্বস্তি নেই বাজারে

সারাদেশে টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর বাজারেও। ফলে বেড়েছে কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ এখন মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমন দাম বৃদ্ধি।
শনিবার মহানগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুধু কাঁচা মরিচই নয়, মাছ ও সব ধরনের সবজির দামও বেড়েছে। বেগুন, শসা, টমেটো, কাঁকরোল, সজনে ডাটার কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মাছ ও মুরগির দামেও বাড়তি চাপ। স্বস্তি নেই চালের বাজারেও।
খড়খড়ি পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা পণ্য এনে মহানগরীতে বিক্রি করেন। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের সরবরাহ অনেক কম। পাকা লাল মরিচের দাম তুলনামূলক কম হলেও সবুজ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা কেজিতে।
পারিলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন কয়েক কেজি মরিচ বিক্রির জন্য হাটে এনেছেন। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে তার খেতে পানি জমে আছে, খেতে নামা যাচ্ছে না। পাশ থেকে কিছু মরিচ তুলে এনেছেন, যেগুলো তিনি ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন। তার আশঙ্কা, বৃষ্টি আরও কয়েকদিন চললে মরিচের খেত নষ্ট হয়ে যাবে। মাঠে পানি বের হওয়ার জায়গা না থাকায় কিছু গাছ ইতিমধ্যেই পচে গেছে।
বিক্রেতা আলী হোসেন জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে গাছে মরিচ ধরেনি। ফলে সরবরাহ কম, দাম বেশি। বৃহস্পতিবার থেকেই মরিচের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, রোদ উঠলে দাম কিছুটা কমতে পারে, তবে বৃষ্টি চলতে থাকলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।
বিনোদপুর ও সাহেববাজার এলাকার কাঁচাবাজারেও একই চিত্র। বিক্রেতারা বলছেন, রোদ না উঠলে মরিচের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী রায়হান আলী বলেন, "বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ নেই বললেই চলে। তাই দামও বেশি।"
এদিকে বাজারে বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। ইলিশ মাছের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কেজি প্রতি ইলিশের দাম ২,৪০০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৩,০০০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, বর্ষায় সবকিছুর উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। তবে ব্রয়লার মুরগি এখনও ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১,১০০-১,২০০ টাকা এবং ডিম ১২০-১৩০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।
বর্ষাকালে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দামও বেশি। কাজলি, ট্যাংরা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১,২০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকায়। আকারভেদে চাষের রুই, কাতলা মাছ ৩০০-৪৫০, পাবদা ৪০০-৫০০, চিংড়ি ৫০০-৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ এবং কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামেও আগুন। বেগুন ১০০-১৪০, টমেটো ৮০-১০০, করলা ৮০-১০০, পটল, ঝিঙে, ধুন্দল ৬০-৮০, শসা ৫০ থেকে বেড়ে ১০০, কচুরমুখী ও কাঁকরোল ৭০-৮০, সজনে ১২০-১৪০, ঢেঁড়স ৫০-৭০ এবং কাঁচা পেঁপে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজারেও ভোক্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। বোরো মৌসুমে দাম কমার আশা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। খুচরা বিক্রেতারা জানান, কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে মিল মালিকরা মজুদ করে রেখেছেন। ফলে তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। মিনিকেট চাল (মনজুর, রশিদ, সাগর) এখন ৭৫-৮০ টাকা, ডায়মন্ড, হরিণ, মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের দাম বেড়ে ৬২-৬৫ টাকা হয়েছে। তবে মোটা চাল এখনও ৫২-৫৫ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।