জুলাইয়ের দিনলিপি
অনলাইন-অফলাইনে ৪ দফার প্রচার, ঢাবি শিক্ষকদের সমর্থন

৫ জুলাই ২০২৪, দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে সারাদেশে একযোগে শুরু হয় চার দফা দাবির ভিত্তিতে অনলাইন-অফলাইন প্রচার।
চার দফা দাবি নিয়ে নাহিদ ইসলামের ঘোষণায় তৈরি হয়েছিল তিন দিনের টানা কর্মসূচির রূপরেখা। ৪ জুলাই শাহবাগ অবরোধ প্রত্যাহারের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরাসরি ঘোষণা দেন- ‘কোনো সরকারি দফতর এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই আমরা থামছি না।’
অনলাইন–অফলাইনে একাত্মতা
সেদিন শুধু মিছিল নয়, ফেসবুক–টুইটার–ইউটিউব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের বার্তা। অনলাইন এক্টিভিস্টদের পোস্ট, বিভাগভিত্তিক বিজ্ঞপ্তি, ব্যাচ ও ক্লাস গ্রুপে সমন্বিত ক্লাস–পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান। সব মিলিয়ে যেন একটা পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল আন্দোলনের চিত্র।
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু লাল ইটের ভবন নয়, তার চেয়ে অনেক বড় একটা সামাজিক চেতনার ঢেউ। শিক্ষার্থীদের ঘোষণা—‘ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হবে’। কেউ কেউ হয়তো প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু, আন্দোলনের ঢেউ যখন রাজপথে নামে, তখন আর কেউ পেছনে থাকেননি। সেই ঢেউ গিয়ে লাগে দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট— সব জায়গাতেই শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে যান চার দফার পাশে।
ঢাবি শিক্ষকদের একাত্মতা
৫ জুলাই শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বিষয়টি প্রবেশ করে বুদ্ধিজীবী পরিসরেও। জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’ এক বিবৃতিতে হাইকোর্টের রায় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানায়। এই সমর্থন শুধু আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাই বাড়ায়নি, বরং একটি নতুন রাজনীতি-শিক্ষা জোটের ইঙ্গিত দিয়ে যায়।
এক আন্দোলন, বহু প্রতিধ্বনি
সেদিনের শুক্রবার ছিল বিশ্রামের নয়, প্রতিরোধের। ক্লাসে নয়, কেউ গিয়েছিলেন রাস্তায়, কেউ প্ল্যাকার্ড বানিয়েছেন, কেউ ফেসবুক গ্রুপে আপডেট করেছেন কোনো বিভাগ কতটা বর্জনে একাত্ম। কেউ গণমাধ্যমে লাইভ দিয়েছেন, কেউ ভিডিও এডিট করে দিয়েছেন, আন্দোলনের পোস্টার ভিডিও। কেউ রাস্তায় স্লোগান দিয়েছেন, কেউ শুধু শেয়ার বাটনে ক্লিক করেও হয়েছেন অংশীদার।
এভাবেই ২০২৪ সালের ৫ জুলাই আন্দোলন ঘূর্ণি হয়ে উঠেছিল। ৫ জুলাই শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছে— সামান্য চার দফা দাবি যদি সংগঠিত হয়, তাহলে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নাড়িয়ে দেওয়া যায়। ফেসবুক থেকে রাজপথ, ক্লাসরুম থেকে কোর্টরুম পর্যন্ত— এটিই ছিল নতুন প্রজন্মের ভাষ্য।