স্বৈরাচারের দোসর ৪৪ সচিব ও ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের নামের তালিকা

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রশাসনে যে সকল সচিব সুবিধা নিয়েছেন এবং স্বৈরাচার সরকারের নানা কাজে সহযোগীতা করেছেন এমন ৪৪ জন সচিবের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে জুলাই ঐক্য। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার ওপরে গুলি চালানো, পেটানো এবং নির্দেশ দাতা ছিলেন এমন ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকাও প্রকাশ করে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই তালিকা সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত ৪৪ সচিবের তালিকায় রয়েছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহানা আহমেদ, আলোচিত সমালোচিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, ডাক ও টেলিযোগ বিভাগের মো. মুশফিকুর রহমান, অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. রুহুল আমিন, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল্লাহ আহসান, বিপিএটিসি রেক্টর সাইদ মাহবুব খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সায়েদুর রহমান, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মো. শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মো.ওমর ফারুক, শ্রম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
এছাড়াও রয়েছেন, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মুসলিম চৌধুরী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দীন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক শরিফা খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সংস্কার ও সময়ন্বয়) জাহেদা পারভীন, ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের চৌধুরী, প্লানিং কমিশনের সচিব এ এম আকমল হোসেন আজাদ, প্লানিং কমিশনের সদস্য ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মমতাজ আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার সংযুক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসাইন খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মুহম্মদ সাইফুজ্জামান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ডক্টর লিপিকা ভদ্র, জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিউট এর মহাপরিচালক মো. আব্দুল কাইয়ুম, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফ্ফর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিউটএর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ বশিরুল আলম, ইকোনমিক মিনিস্টার ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত মেহেদী হাসান, বস্ত্র ও পাট সচিব মো. আব্দুর রউফ, সরকারি কর্মচারি কল্যান বোর্ডের মহাপরিচালক কাজী এনামুল হাসান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় থাকা প্রশাসনের এই ৪৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারি নানা কর্মকাণ্ডের সহায়তা করা, কারো বিরুদ্ধে কট্টোর আওয়ামী মনোভাবসহ নানা সুবিধাভোগের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
একই সঙ্গে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থানে থেকে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকাও প্রকাশ করেছে জুলাই ঐক্য। সেখানে যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন- ঢাকা জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার উজ্জল কুমার হালদার, ঢাকা জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর অমিত কুমার সাহা, ঢাকা জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার শামসুজ্জাহান কনক, ঢাকা জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার সোনিয়া হোসেন জিসান, ঢাকা জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার আফরিন জাহান, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার শরিফ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার অংমাচিং মারমা, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সায়েম ইমরান, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সাদিয়া আক্তার, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান রাসেল, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাকির হোসেন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাইখা সুলতানাসহ প্রাথমিক তালিকায় ৯৫ জনের নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে জুলাই ঐক্য। সংগঠনটির নেতারা বলছেন সংবাদ সম্মেলনে এই সংখ্যক নাম তুলে ধরা হলেও বাকি নাম শিগগিরই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেবেন।
উল্লেখ্য, ৮০ টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠন করার জুলাই ঐক্য দেশের সকল ধরনের জুলুম, স্বৈরাচারি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় ও কাজ করে যাচ্ছে। তালিকায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সকলে নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, এদের অপসারন না করা হলে জুলাই আন্দোলন ব্যহত হবে। তারা এই তালিকা প্রধান উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তুলে দেবেন তারা। ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরবর্তি আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।