ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩২


প্রত্যাহার হচ্ছেন ডিসি আরডিসি নাজিম বহাল


১৬ মার্চ ২০২০ ১০:৪৭

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ১৩:২৮

ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা পাওয়া কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার সকালে তাকে জামিন দেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা। তবে জামিন চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন বা আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু।

এদিকে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) জেলা প্রশাসনের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার, রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরিফুলের অভিযোগ, নাজিমের নেতৃত্বেই চালানো হয় নির্যাতন।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলা ট্রিবিউনের’ কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে এ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কেএম তারিকুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে।

তদন্তের বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের একটি খসড়া পেয়েছি। খসড়া প্রতিবেদনটিই মূল প্রতিবেদন। তদন্তের মধ্যে আমরা অনেক অনিয়ম পেয়েছি। সেসব অনিয়ম অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার (ডিসি সুলতানা পারভীন) বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিউর (বিভাগীয় ব্যবস্থা) অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। অহেতুক যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে, যেটি আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়মকানুন আছে, নিয়মকানুন অনুযায়ী যে কাজগুলো হয়নি, যেটি নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন উঠেছে। সেগুলোর অনেকগুলোর সত্যতা পেয়েছি বিধায় আমরা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি এবং সেটি প্রক্রিয়াধীন।’


প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওখানে যারা কাজ করেছেন তাদের সম্পর্কে আমাদের পুরোপুরি তদন্ত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি অনিয়মের জন্য কে কী রকম রোল প্লে করেছেন সেই রোলটি যদি আইনবহির্ভূতভাবে নিজের চিন্তাভাবনা মতে করে থাকেন, অবশ্যই তিনি দোষীসাব্যস্ত হবেন। সেই অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব।’

সাংবাদিককে শাস্তি দেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফুল মুক্ত হয়েছেন। আমরা এখন চেষ্টা করছি, সরকারি যে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়াটা আমাদের জন্য অপরিহার্য। সেই বিষয়গুলোর জন্য আমরা এগোচ্ছি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক অসংগতি পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।’ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের প্রসিডিউরের কিছু ব্যাপার আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বাক্ষর না হবে ততক্ষণ আমাদের জানানোটা বিধিসংগত হয় না। প্রথমত তাকে (ডিসি) ওখান থেকে প্রত্যাহার করা হবে। দ্বিতীয়ত তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিউর নেওয়া হবে। ডিপার্টমেন্টাল মামলা হবে, সেই অনুযায়ী তার যে বিচার সেটি হবে।’

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ মহলে আলাপ-আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘(ডিসি) প্রত্যাহার তো হবেনই। তারপর পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত নেব। আমি আশ্বস্ত করছি, তার কর্ম অনুযায়ী শাস্তি হবে।’

আরিফের কী হবে সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাজা হয়েছে, আটকও হয়েছিলেন। অবশ্যই আমাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসবে। আমাদের তদন্তের মধ্যে অনেক কিছু পেয়ে গেছি।’

এ ঘটনার মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রশ্নবিদ্ধ হলো কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল কোর্টটা অত্যন্ত জরুরি, কারণ তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিগুলো দিতে পারে। রমজান মাস আসছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো থেকে শুরু করে নানান রকম ঘটনা ঘটে, ভেজাল জিনিস বিক্রি করে, সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অত্যন্ত উপযোগীভাবে কাজ করে। কেউ কোনো অনাচার করছে, কোনো কিছু করছে, সেটাও কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে (বিচার) হয়। আমরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক। ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে অবশ্যই বিষয়টি মাথায় রেখেছি। আমরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি জনস্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত অত্যন্ত প্রয়োজন, সেখানে যেন বিতর্ক সৃষ্টি না হয়।’

একপর্যায়ে পাশে থাকা জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘৫-৬ হাজার কর্মকর্তা। এর মধ্যে দুই-একজন খারাপ হতে পারেন। যখন আমরা নিয়োগ দিই তখন তো দু-একটি ভুল হতেই পারে। একজন কর্মকর্তার অতীত কর্মকাণ্ড বিচার বিশ্লেষণ করে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে দুয়েকটা ভুল হয়ে যেতে পারে। দুয়েকজন কর্মকর্তার অনিয়মের দায়ভার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কখনই নেয় না। ডিসি নিয়োগের জন্য আগে শুধু কিছু সংস্থা থেকে প্রতিবেদন নেওয়া হতো, এখন জেলা প্রশাসক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়াও স্বাধীনতার সপক্ষের লোকের কাছেও আমরা খোঁজখবর নিই।’

এদিকে এ ঘটনায় টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, দিনাজপুর ও হাকিমপুর উপজেলা, কুমিল্লায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা।