মাত্র ১৪ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক!
এই সাদাসিদে জীবনের নেতা চাইলে অনেক কিছুই হতে পারতেন, কিন্তু তার নির্মোহ রাজনৈতিক জীবন এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অনেক সুযোগ ছিলো। হতে পারতেন প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যাংকের পরিচালক, কিংবা থাকতে পারতেন আরো বড় কিছুর নেতৃত্বে।
কিন্তু প্রভাব-প্রতিপত্তি তাকে ছুঁতে পারেনি। পড়াশোনার বিষয় ছিলো রাজনীতি বিজ্ঞান। সেই রাজনীতির জ্ঞানকেই করে নিয়েছেন জীবনের ধ্যান। রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চান না। অবশ্য রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই সবরকম প্রভাব-প্রতিপত্তি গড়ে ওঠে। এটাই আজকের দিনের স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই ব্যক্তির বেলায় চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সাদাসিদে জীবনযাপন অনেককেই মুগ্ধ করে। রাজধানীর খিলগাঁও-বাসাবো এলাকায় মাত্র ১৪ হাজার টাকা ভাড়ার একটি ছোট্ট বাসায় থাকেন পরিবার-পরিজন নিয়ে।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি। তৃণমূলপর্যায় থেকে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের মায়া ত্যাগ করে আর কিছুতে জড়িত হতে চাননি। ব্যক্তিগত জীবনের দৈন্যদশা চুকিয়ে ফেলার সুযোগ এসেছিলো অনেকবার। কিন্তু তিনি সেসব প্রস্তাব লুফে নেননি একমাত্র রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন বলে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট তার প্রত্যাশা ছিলো , যেন তাঁকে রাজনীতির সঙ্গেই মিশে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিকের জীবন যেন লাইনচ্যুত না হয়ে যায়। শেষমেশ প্রধানমন্ত্রীই তাঁর সততা ও নিষ্ঠার পুরস্কারস্বরূপ সে সুযোগটি করে দিলেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সভাপতি থেকে বানিয়ে দিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। যুবলীগ নেতা বলতেই চোখের সামনে প্রায়ই ভেসে ওঠে টেন্ডারবাজি, অল্প কয়েক দিনে কোটি কোটি টাকার গাড়ি-বাড়ির মালিক।
কিন্তু হারুনুর রশিদ সবার চেয়ে ভিন্ন, এতো বড় একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকায় নেই একটি নিজের বাড়ি। আর ভাড়া বাসার কথা বললেই যেন অবাক হওয়ার মতো।
থানা কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। আর হারুনুর রশিদ মাত্র ১৪ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকেন। নিজের চলাচলের জন্য ছিল না কোনো গাড়ি। রিকশা আর সিএনজি দিয়েই চলাচল করতেন হারুনুর রশিদ। সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরো বেশি বেশি সংযোগ বাড়ানো এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে চলাচলের জন্য হারুনুর রশিদকে একটি গাড়ি উপহার দেন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা। আর যে মানুষটি ধ্যানজ্ঞান শুধুই রাজনীতি তাঁর ভরণপোষন নিয়ে চিন্তিত থাকে পরিবার।
তাঁর স্ত্রীর একটি ঔষধ কম্পানির চাকরি ও ছোট খাট ব্যাবসার টাকায় তাঁর সংসার চলে। সন্তানদের পড়াশোনার জন্যেও উচ্চাবিলাসী হতে যাননি। ছেলে রেদওয়ান রশীদ নিলয় গাজীপুরের আইইউটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং মেয়ে সাদিয়া আফরিন নাফিছা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করছেন। ফলে স্বল্প আয়ে সুন্দরভাবেই চলে যায় সংসার।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, 'বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীনতার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, সেই স্বপ্ন ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নির্দেশেই কাজ করে যাচ্ছি। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নেত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ি কাজ করে যাবো'।
নরসিংদীর রায়পুরায় জন্ম এই প্রচারবিমুখ রাজনীতিকের। বাবা আবদুল মালেক মোল্লা, মা জামিলা খাতুন। হারুনুর রশিদ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন রাজনীতির প্রতি মনোযোগী। স্থানীয় আর কে আর এম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রায়পুরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে শেষ করেন পড়াশোনা।
নরসিংদীর রায়পুরা থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা হারুনুর রশিদের। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হলে রায়পুরা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পথে পাড়ি দিয়েছেন অনেক পথ। এর মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, আওয়ামী যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে।
শুধু রাজনীতি নয়, দেশকে লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকা এনে দেওয়ার যুদ্ধেও ছিলেন অগ্রভাগে। অস্ত্র হাতে করেছেন মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের ডিসেম্বরে একে একে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন আত্মসমর্পন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো পাক হানাদার বাহিনী, তখন দেশের পতাকা তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু হারুনুর রশিদ ছিলেন ব্যতিক্রম। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে রায়পুরায় তিনি উঁচিয়ে ধরেন বাংলাদেশের পতাকা। সেটিই ছিলো সর্বপ্রথম রায়পুরায় বাংলাদের পতাকা উত্তোলনের ঘটনা।
রাজনীতি করতে গিয়ে কারাবরণ, মামলা-হামলার শিকারও কম হননি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছিলেন হারুনুর রশিদ। প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ আটক করে এবং তাঁর উপর চলে অমানুষিক পুলিশী নির্যাতন। তাঁর একটি হাতও ভেঙ্গে দেওয়া হয় সে সময়। জেল খাটেন চার মাস। এ ছাড়া ২০০১ সালে এবং ২০০৪ সালেও গ্রেপ্তার ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন ।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক সোহেল পারভেজ বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে যুবলীগ অত্যন্ত সুন্দর, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করছেন হারুনুর রশিদ। তাঁর কথা ও লেখায় ফুটে ওঠে এ দেশের হাজারও ছাত্র যুবকের মনের ভাষা। বিভিন্ন সময়ে ছাত্র নেতাদের ওপর চলা জুলুম নির্যাতনের ঘটনাপ্রবাহও তুলে ধরেন নিখুঁতভাবে।
রায়পুরার এলাকাবাসী জানান, যাঁর নেতৃত্বগুণে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথরিয়া ঐক্যবদ্ধ, সেই হারুনুর রশিদই আমাদের আগামীর অভিভাবক। তাঁর অভিভাবকত্বে রায়পুরার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই নেতার ওপরেই আস্থা রাখতে চান এই এলাকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা।