আস্থার নতুন নাম এসি ল্যান্ড বাসিত সাত্তার

সরকারি অফিসে সেবা মানেই যেন ভোগান্তি, দালাল আর ঘুষের এক দুষ্টচক্র-এই ধারণাটিকেই ভুল প্রমাণ করেছেন খিলক্ষেত ক্যান্টনমেন্ট ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসিত সাত্তার। গত ৫ মে যোগদানের পর চার মাসেরও কম সময়ে তিনি কেবল অফিসের চিত্রই পাল্টাননি, বরং এক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন। তবে এই পথচলা মোটেও মসৃণ ছিল না। দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলার এই উদ্যোগে তাকে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরও মোকাবেলা করতে হয়েছে।
আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, খিলক্ষেত ভূমি অফিস দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী দালাল ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নামজারি, জমাভাগ, বালাম তৈরি কিংবা পর্চা প্রদান-প্রতিটি কাজেই ছিল তাদের অদৃশ্য হাত। ফাইল আটকে রেখে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
এই চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন এমন একজন ভুক্তভোগী, অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আফজাল আহমেদ বলেন, “বাবার নামের জমিটা নিজের নামে করতে দুই বছর ধরে ঘুরছি। প্রত্যেক টেবিলে টাকা না দিলে ফাইল এক ইঞ্চিও নড়ত না। দালালরা এমনভাবে ঘিরে ধরত যে তাদের ছাড়া কাজ হবে, এটা বিশ্বাসই করতাম না।”
বাসিত সাত্তার যোগদানের পর প্রথম সপ্তাহেই এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম চিহ্নিত করেন। তিনি অফিসে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেন এবং নিজের কক্ষের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয় এবং সরাসরি গণশুনানির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গিয়ে তিনি দ্রুতই সেই স্বার্থান্বেষী মহলের চক্ষুশূল হন। যখন তাদের অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন তারা বাসিত সাত্তারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বোনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একজন সহকর্মী সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “বাসিত সাত্তার স্যার যোগদানের পর থেকে অফিসের চিত্র পাল্টে গেছে। তিনি নিয়মের বাইরে একচুলও যান না। তার সততা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার চেষ্টাই অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিল। সম্প্রতি একটি মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে তাকে হেনস্থা করার ঘৃণ্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তদন্তে সবকিছু দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। অভিযোগটি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল, তা প্রমাণিত হওয়ার পর অভিযোগকারী নিজেই মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, সত্যকে সাময়িকভাবে ঢেকে রাখা গেলেও একেবারে মুছে ফেলা যায় না।”
এই মুচলেকার ঘটনাটি অফিসের ভেতরে ও বাইরে সৎ কর্মকর্তা বাসিত সাত্তারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও সম্মান বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এখন ভূমি অফিসের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা বা দালালের পেছনে ছোটাছুটির দৃশ্য আর নেই। সেবা নিতে আসা কুর্মিটোলার বাসিন্দা এবং একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আকরাম হোসেন বলেন, “ব্যবসার জন্য জমির কিছু কাগজপত্রের দরকার ছিল। আগের অভিজ্ঞতা থেকে ভয়ে ভয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এখনকার পরিবেশ দেখে আমি অবাক। কোনো দালাল নেই, হয়রানি নেই। সরাসরি এসি ল্যান্ড স্যারের সাথে কথা বললাম, তিনি দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করে দিলেন। এমন একজন জনবান্ধব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার করে, তারা শুধু ব্যক্তি বাসিত সাত্তারের নয়, তারা এই দেশের শত্রু।”
আরেকজন সেবাপ্রত্যাশী নারী বলেন, “আগে এখানে আসতে ভয় লাগত। দালালদের কথাবার্তা আর অফিসের লোকদের রুক্ষ আচরণে অসহায় বোধ করতাম। এখন আমরা নির্ভয়ে এসে সরাসরি স্যারের কাছে সমস্যার কথা বলতে পারি। তিনি আমাদের অভিভাবকের মতো শোনেন এবং সমাধান দেন।”
একজন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তার একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা কীভাবে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের খোলনলচে পাল্টে দিতে পারে, খিলক্ষেত ভূমি অফিস তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাসিত সাত্তারের উদ্যোগ প্রমাণ করেছে, সততা ও সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। তার বিরুদ্ধে হওয়া ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণ যখন কোনো সৎ কর্মকর্তার পাশে থাকে, তখন কোনো অপশক্তিই টিকতে পারে না। খিলক্ষেত ভূমি অফিস এখন কেবল একটি সরকারি দপ্তর নয়, এটি একটি জনবান্ধব সেবাকেন্দ্রের মডেলে পরিণত হয়েছে, যা অন্য সবার জন্য অনুকরণীয়।