ফ্যাক্টচেক
দেশে এসে গেছে সোলার রিকশা?

ঢাকায় পা-এ টানা রিকশা দেখা গেলেও গ্রামে এখন ব্যাটারিচালিত রিকশাই বেশি দেখা যায়। যান্ত্রিক জীবনে যন্ত্র-চালিত রিকশা বাঁচিয়েছে সময়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান সরকার বন্ধ করতে চেয়েছে অনেকবারই।
ফেসবুকে গতকাল শনিবার থেকে একটি ছবি নিউজ ফিডে ঘুরছে। পোস্টে লেখা আছে, এসে গেল সৌর বিদ্যুৎ চালিত রিকশা, আর কোনো চিন্তা নেই! কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে দেখা গেল, পোস্টগুলো হাজার হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে, আর নিচে অজস্র ইতিবাচক মন্তব্য।
পোস্টগুলো প্রচুর শেয়ার হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীতবিডি কারজ নামে একটি গ্রুপে ৬ হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন, শতাধিক শেয়ার। দিকদর্পন নামে একটি পেজে ৬৩ হাজার রিঅ্যাকশন, ১০ হাজারের বেশি শেয়ার। প্রাথমিক শিক্ষক পরিবার নামের গ্রুপে ৩ হাজার রিঅ্যাকশন, তিন শতাধিক শেয়ার। খুঁজে পাওয়া গেল মূলধারার গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে খোলা কয়েকটি গ্রুপ। চ্যানেল ২৪ নিউজ লাইভ নামের গ্রুপে ৬ হাজার রিঅ্যাকশন, ১ হাজার ৭০০ শেয়ার। এরকম কয়েক শ গ্রুপে খুঁজে পাওয়া গেছে একই তথ্য আর ছবি সম্বলিত পোস্ট।
বাঁয়ে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত ছবি, ডানে সাম্প্রতিক ভাইরাল হওয়া ছবি। ছবি: সংগৃহীতফ্যাক্টচেক
মূল ছবিতে মাথায় শিখ পাগড়ি পরা একজনকে দেখা গেলেও সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া পোস্টে ইমোজি দিয়ে ব্যক্তিটির মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করে দেখা গেছে, ছবিটি এর আগেও বিভিন্ন প্লাটফর্মে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই দিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) ক্যাম্পাসে সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রনিকস লিমিটেডের পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে রিকশা চালকদের হাতে স্মার্ট সৌর বিদ্যুৎ চালিত রিকশা তুলে দেওয়া হয়। আইআইটির টুইটার অ্যাকাউন্টে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
আইআইটির টুইটার অ্যাকাউন্টে সৌর বিদ্যুৎ চালিত রিকশার ছবি। ছবি: সংগৃহীতভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াতে এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বছর ২০ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তথ্যটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন। ছবি: সংগৃহীতবাংলাদেশে একই ছবি ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট মো. রমজান আলী নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডিতে পাওয়া যায়। ভারতের বেশ কিছু অনলাইন সাইটেও ছবিটি খুঁজে পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুৎ চালিত রিকশা আছে?
২০১৪ সালে দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রথমবারের মতো সৌর বিদ্যুৎ চালিত ভ্যান ও রিকশার মতো একটি গাড়ি তৈরি করেছিলেন চুয়াডাঙ্গার সাজ্জাদ হোসেন শান্ত। তিনি এ গাড়ির নাম দিয়েছিলেন সূর্য গাড়ি।
২০১৫ সালে সরকারি অনুদানে সৌরশক্তি চালিত বিশেষ রিকশা উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশের দুইজন গবেষক। তাঁরা জানিয়েছিলেন, এসব রিকশা চালাতে প্যাডেল কিংবা বিদ্যুৎ চার্জ প্রয়োজন হবে না, এটি নিজে থেকেই হুডের উপরে থাকা সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করবে এবং ব্যাটারিতে তা জমিয়ে রাখবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়ছার ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রভাষক আবু রায়হান মো. সিদ্দিক মিলে তৈরি করেছিলেন এই পরিবেশবান্ধব রিকশা।
তবে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য বাংলাদেশের বাজারে এখনো সৌর বিদ্যুৎ চালিত কোনো রিকশা আসেনি।
সিদ্ধান্ত
ফেসবুকে ভাইরাল ছবিটি বাংলাদেশের নয়। ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) ক্যাম্পাসে সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রনিকস লিমিটেডের পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে রিকশা চালকদের কাছে সৌর বিদ্যুচ্চালিত রিকশা হস্তান্তরের দৃশ্য সেটি।
ফ্যাক্টচেক