ঢাকা শনিবার, ১২ই এপ্রিল ২০২৫, ৩০শে চৈত্র ১৪৩১


টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না সিনেমার মা


২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৫১

আপডেট:
২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৫৬

 অভিনয়শিল্পী রেহানা জলি

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর চলচ্চিত্রে আসা। মা হয়ে সিনেমার পর্দায় কত নায়ক-নায়িকা, সন্তানকে যে রেহানা জলি আগলে রাখতেন, তার হিসাব নেই। বাংলা সিনেমা দেখেছেন এমন কোনো দর্শক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে, যাঁরা অভিনয়শিল্পী রেহানা জলিকে চেনেন না। সিনেমায় তাঁর দুঃখ–কষ্টে কাতর হননি এমন মানুষ কমই আছেন। ৩৮ বছরের অভিনয়জীবনে এসে রেহানা জলি যে গল্প শোনালেন, তা সিনেমাকেও হার মানায়। প্রচণ্ড অসুস্থ তিনি। ভীষণ কষ্টে আছেন তিনি। অসুস্থতার কারণে অভিনয় করতে পারছেন না প্রায় এক বছর।

চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে বোনের বাসায় থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন রেহানা জলি। কিন্তু তিনি বড় একা। তিন দশকেরও বেশি সময় যে চলচ্চিত্র পরিবারের বাসিন্দা ছিলেন, এখন সেখান থেকে কেউ তাঁর খবর আর নেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কথা বলার সময় বারবারই নিজের কান্না চেপে রাখতে পারছিলেন না।

অভিনয়জীবনটাকে পেছনে ফিরে দেখার চেষ্টা করছিলেন রেহানা জলি। তিনি বলেন, ‘কী করলাম জীবনে। চার শ ছবিতে অভিনয় করেছি। সবকিছুই কি তাহলে মিথ্যা। সবই অভিনয়। এই জগতে দেখছি কেউ কারও নয়। এ কেমন জীবন আমাদের। এমন জীবন তো চাইনি।’

এক বছর আগে রেহানা জলির শরীরে ফুসফুসের প্রদাহ ধরা পড়ে। এরপর মেরুদণ্ডের হাড়ের সমস্যাও ধরা পড়ে। মেরুদণ্ডের হাড়ের সমস্যার পরপরই চিকিৎসক রেহানা জলিকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। এদিকে পাঁচ মাস আগে ফুসফুসে ক্যানসারের জীবানু ধরা পড়ে। এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলে জানান রেহানা জলি। শুরুর দিকে ফুসফুস ও হাড়ের চিকিৎসায় মাসে ৩০–৪০ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এত খরচ দেখে তিন মাস ধরে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না তিনি।


১৯৮৫ সালে জীবনের প্রথম যখন সিনেমায় অভিনয় করেন, তখন রেহানা জলি ছিলেন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস স্কুলে পড়তেন। ঠিক সে সময়টাতে কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘মা ও ছেলে’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। প্রথম সিনেমায় চিত্রনায়ক আলমগীরের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন রেহানা জলি। প্রথম সিনেমায় প্রশংসা কুড়ান। অর্জন করে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর সম্মাননা। এরপর অভিনয়ের ট্রেন আর থামেনি। চালিয়ে গেছেন পড়াশোনাও। ডিগ্রিতে ভর্তি হলেও চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। শুরুর দিকে ৪০টির মতো ছবিতে নায়িকা এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রেহানা জলি। খুব অল্প সময়ে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেও নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করে নেন।

রেহানা জলি মা হিসেবে অভিনয় করেছেন আলমগীর, রাজ্জাক, ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানী, মান্না, সালমান শাহ, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, শাকিব খান, সাইমন ও বাপ্পীর। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাকিব খানের মা হিসেবে অভিনয় করেছেন। শুধু মা চরিত্রের নয়, শুরুর দিকে ৪০টির মতো সিনেমায় নায়িকাও হয়েছেন রেহানা জলি। এসব ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘প্রেম প্রতিঘাত’, ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’, ‘নিষ্পাপ’, ‘মহারানী’, ‘গোলমাল’, ও ‘চেতনা’।

এক বছর ধরে ছোট বোন লাইজুর সঙ্গে ইস্কাটনের গাউসনগর এলাকায় আছেন রেহানা জলি। তিন দশকেরও বেশি সময় যেসব সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের নীরবতায় কষ্ট পেয়েছেন রেহানা জলি। তিনি বলেন, ‘আমার পুরো জীবনটাই কেটেছে অভিনয়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুটিং করে গেছি। দেশের নামকরা সব নায়ক–নায়িকার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। অথচ গত এক বছরে কেউ একটাবারের জন্যও আমার খোঁজ নিল না। কেউ একজন তো ফোন করে অন্তত জিজ্ঞেস করতে পারত, জলি আপা, কেমন আছেন! অসুস্থ হয়ে মানুষ চিনতে পারছি।’

রেহানা জলি এ–ও বলেন, ‘আমার বোনেরা ছিল বিধায় আমি বেঁচে আছি। ওরা যদি না থাকত, আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতাম! চিকিৎসা ভালোভাবে হলে আমি আবার কাজে ফিরব। ভারতের অনেক শিল্পী আছেন রোগ নিয়েও কাজ করেন। আমার আগে সঠিক চিকিৎসা দরকার। টাকাপয়সা, সবকিছু দিয়ে বোনেরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এক বছর ধরে অনেক খরচ হয়েছে। ওদের আর কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে না। ফুসফুসের ক্যানসার যেহেতু প্রাথমিক পর্যায়ে, তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যদি সহযোগিতা পাই, দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করে আসব। আবার কাজে যোগ দেব।’