ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার শোবিজ অঙ্গন


১১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৩

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ১৯:২৪

দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একাধিক বর্বরতম ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবাই চান, ধর্ষণ বন্ধ হোক, ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। অন্য সবার মতো বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও ধর্ষণের ঘৃণিত ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ নিজ অবস্থান থেকে ধর্ষণ বন্ধে নানা প্রস্তাবনাও রেখেছেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘ধর্ষণ নামক এক ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীর ওপর যারা এমন পাশবিক আচরণ করছে, তারা মানুষ নামের অমানুষ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে তাদের ধর্ষণসন্ত্রাস।

আসুন সবাই মিলে ধর্ষকদের প্রতিরোধ করি। তুলে দিই আইনের হাতে। আর তাদের ব্যাপারে দাবি একটাই, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার জটিল জট ভেঙে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চয়তা। ধর্ষকদের রক্ষা নাই, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সোচ্চার হয়ে বলি সবাই, বন্ধ হোক ধর্ষণ। নারী মাতা, নারী বধূ, কন্যা এবং বোন।’

ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান লিখেছেন, ‘নারীর পরিচয় তিনি একজন মানুষ। সমাজ এখনো অনেক ক্ষেত্রে নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চায় না।

তারপরই নারী কারও মা, কারও বোন। এই মা বা বোনকে মানুষ হিসেবেই শ্রদ্ধা করা উচিত, গণ্য করা উচিত, মান্য করা উচিত এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন নারী একজন মা, পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গে মায়ের তুলনা হয় না। যারা একজন মা আর বোনকে অন্য চোখে দেখে, ধর্ষণের মানসিকতা মনের মধ্যে লালন করে, সে মানুষই নয়।

তার একমাত্র পরিচয় সে ধর্ষক।’ ধর্ষণের শাস্তি প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘দেশে মহামারীর চেয়েও ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ। এর কারণ ওইসব মানুষরূপী নরপশুর নৈতিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, ধর্ষণসংশিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতা, বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা।

দলমত-ক্ষমতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি বিষয়টি নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। নয়তো মৃত্যু বা ধ্বংস অনিবার্য। আমাদের দেশে অনেক সম্ভাবনা আছে, সরকার চেষ্টা করছে দেশের উন্নয়নে। কিন্তু দেশের প্রধান শক্তি হলো জনগণ।

সেই জনগণের মধ্যেই যদি এমন বর্বরতম বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে তখন আর সোচ্চার না হয়ে উপায় থাকে না। শিল্পীদের আমি বলি সমাজের দর্পণ। আমাদের স্তরের মানুষগুলো যদি এভাবে অপরাধের বিপক্ষে অবস্থান নেয় তাহলে অপরাধীরা অপরাধ করে কখনই পার পাওয়ার চিন্তা করবে না।

তবে শুধু ফেইসবুকে ব্ল্যাক বা রেড প্রোফাইল ছবি নিয়ে লাভ নেই। কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি শিগরিই চালু করতে হবে। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। জনসম্মুখে মেরে ফেলতে হবে ধর্ষককে। তবেই বাকিরা সাবধান হয়ে যাবে। আদালতের দীর্ঘমেয়াদি বিচার থেকে এদের আলাদা করতে হবে। তবেই এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

অভিনেত্রী, নির্মাতা ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘গত কয়েক দিন সত্যি আমি খুব মুষড়ে পড়েছি। আমি ভাবতে পারছি না দেশে কী হচ্ছে? জঘন্য বিষয়টি নিয়ে এখন আর কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না। যা বলার ফেইসবুকে সবার সামনেই বলেছি।

তিনি ফেইসবুকে লেখেন, ‘মৃত্যুদন্ড কিংবা ক্রসফায়ার, কোনো শাস্তিই যথেষ্ট নয় ধর্ষকরূপী এ অমানুষগুলোর জন্য। এত সহজে তাদের মরে যেতে দিলে তো হবে না! ধর্ষকের এমন কঠিন শাস্তির বিধান হোক যেন তারা প্রতিটি মুহূর্তে নিজেদের মৃত্যু কামনা করে। স্বাধীনতা স্তম্ভের নিচে বিশাল জনসমুদ্রের সামনে সেই ভয়াবহতম শাস্তি কার্যকর হোক, সব টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হোক যেন প্রত্যেকটা সম্ভাব্য ধর্ষক শিউরে ওঠে। আর কোনো নপুংসকের কল্পনায়ও যেন ধর্ষণের চিন্তা না আসে।’

ছোট ও বড় পর্দার মেধাবী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমি পুরুষ বা নারীকে আলাদা করে দেখি না। আমরা সবাই মানুষ। কিন্তু যে ধর্ষক, সে অমানুষ। ফেইসবুকে দেখছি সবাই শুধু অন্যকে জ্ঞান দেওয়ায় ব্যস্ত। সেটা না করে যে যার কর্তব্যটা নিজে পালন করুন, তাহলেই এমন ঘটনা আর আমাদের দেখতে হবে না।’