সুন্দরবন উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে চাঁদা দাবি ও বাধা প্রদানে কাজ বন্ধ; প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

প্রলংকারি ঘূর্নিঝড় আমফান ও রেমালে বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝাপালি, পশ্চিম দূর্গাবাটি, পূর্ব দূর্গাবাটি, দাতিনাখালিসহ ৫টি পয়েন্টে টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণের সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও চাঁদাবির ঘটনায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সংশিলিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর রাদ কর্পোরেশনের এডমিন ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রহমান। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জুয়েল রানা।
সাংবাদিক সম্মেলনে নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান ও চাঁদাদাবি'র অভিযোগ আনা হয়েছে বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর রাদ কর্পোরেশনের এডমিন ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রহমান জানান, আর রাদ কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী যৌথ চুক্তির মাধ্যমে প্রায় শতকোটি টাকার জাইকার অর্থায়নে পাওবি'র-১ এর শ্যামনগর উপকূলীয় পাঁচটি স্থানে নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ পেয়েছে। তার-ই ধারাবাহিকতায় সেখানে কাজ চলমান রাখে। প্রকল্প শুরু থেকে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছে। এই কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদান বুয়েট পরীক্ষাগারে কৃতকার্য হওয়ার পরে কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজটি জায়কা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি দল প্রতিমুহূর্তে মনিটরিং ও পরিদর্শন করছেন। সেক্ষেত্রে কোন প্রকার অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করার সুযোগ নেই।
এখানে প্রকল্পের কাজ নির্বিচ্ছিন্নভাবে চলমান থাকলেও গত ৫ আগস্টের পর দেখা দেয় নানা ধরনের বিপত্তি। স্থানীয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল হাজি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অতি সম্প্রতি আর রাদ কর্পোরেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল হাজির ছত্রছায়ায় কিছু দুষ্কৃতিকারী লোক মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে প্রকল্প এলাকায় নজরুল হাজিকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে কিভাবে কাজ সম্পন্ন হয় সে বিষয়টি দেখে নেওয়াসহ প্রকল্পের অফিসের সমস্ত মালামাল লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয় চাঁদার ১২ লাখ টাকার পাশাপাশি কমিশনের টাকা পর্যায়ক্রমে দিতে হবে একই সঙ্গে আকাশ নীলা ইকো ট্যুরিজমে আর রাদ কর্পোরেশন ফিসারিশ এন্ড এগ্রো পার্কের নামে যে ঘের সরকারি বন্দোবস্তের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে সেই ঘেরেও একটি বড় অংশ থেকে ভাগ চাওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে কোন ভাগ না দেওয়ায় সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের জীবননাশের হুমকি দিয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফলে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল হাজী তার সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী ও শ্রমিকরা ভীতিসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে গত ১১ সেপ্টম্বর শ্যামনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এসব কারনে এই মূহুর্তে সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে গত ২২ আগস্ট প্রতিষ্টানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সবুজ খান ও ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী সোনাকান্দা দপ্তরকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।
চাঁদা দাবির বিষয়ে বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পোড়াকাটলা ও বুড়িগোয়ালিনী দুটি মৌজার চিংড়ীমহলে ২৪ একর ৭২ শতক জমি রয়েছে। তার মধ্যে ৪ একর জমি আমি এজারা নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ নিয়ে আমার চিংড়ী ঘেরের ভিতর দিয়ে বাঁধ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য করে। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আমি ক্ষতি পুরুনের জন্য আবেদন করলে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপুরুন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তারা সেটি না করে চাঁদার দাবিতে আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেস্টা করছে।