ঢাকায় এসিসির সভা : ভারতের গোস্সা, বিসিবির করণীয়

২৪ ও ২৫ জুলাই ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বসবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা। সভার প্রস্তুতি শেষের দিকে। এ উপলক্ষে এসিসির অগ্রবর্তী দলও চলে এসেছে ঢাকায়। এসিসির ২৫টি সদস্যদেশের মধ্যে ১৬-১৭টি সদস্যদেশ এরই মধ্যে সভায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বিসিবি।
তবে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এসিসির সভায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) যোগ দিচ্ছে না, তা একরকম নিশ্চিত। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এরই মধ্যে এসেছে, দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে বিরাজমান শীতলতার কারণেই বিসিসিআই সভায় যোগ দেবে না।
এসিসির আরও কিছু সদস্য বোর্ডও নাকি এই বৈঠক বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে আছে টেস্ট খেলুড়ে দেশ শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তানও। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ–ও বলেছে, বিসিসিআই এসিসিকে অনুরোধ করেছে সভাটি বাংলাদেশের পরিবর্তে অন্য কোনো দেশে আয়োজন করতে। কিন্তু এসিসি তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
বিসিবির অভ্যন্তরীণ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ লিখেছে, ‘মনে হচ্ছে ঘটনাটি একটি ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পক্ষ থেকে বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব পাওয়ার পর (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান) আমিনুল ইসলাম আরও সতর্কভাবে বিষয়টি সামলাতে পারতেন।’
বিসিবির আরেকটি সূত্র উদ্ধৃত করে তারা এ–ও লিখেছে, ‘বুলবুলকে (আমিনুল) বৈঠক বাতিল করতে বলা হয়েছিল। কারণ, বোর্ডের কিছু পরিচালক এমন কিছু করতে চাইছিলেন না, যাতে বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) অসন্তুষ্ট হয়। কিন্তু সভাপতি (আমিনুল) জোর দিয়ে বলেন যে তিনি আগে থেকেই পিসিবিকে (পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড) কথা দিয়েছেন, তাই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে তিনি সরে আসতে পারবেন না।’
এসিসির সভা শেষ পর্যন্ত ঢাকাতেই হলে ভারত ১০ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপও বর্জন করতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক—ঢাকায় এসিসির বার্ষিক সভা আয়োজন নিয়ে ভারতের নেতিবাচক অবস্থানে বিসিবির মনোভাব কী?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম কাল বলেছেন, এসিসির বার্ষিক সভা এসিসিরই একটি ‘প্রোগ্রাম’, বিসিবি স্বাগতিক হিসেবে সেটি আয়োজন করবেমাত্র। বিসিবির অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এসিসির পক্ষ থেকে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে এজিএমটি ঢাকায় আয়োজন করতে। স্বাগতিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এসিসির পরামর্শে বৈঠকটি সুন্দরভাবে আয়োজন করা, এর বেশি কিছু নয়। এসিসি যদি এখনো বলে বৈঠকটি বাংলাদেশে না করে অন্য কোনো দেশে করবে, তাতেও আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। বিসিবি এখানে কোনো পক্ষ নয়।’
বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ১৬-১৭টি সদস্যদেশের প্রতিনিধি ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এজিএমে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তাঁদের সবার অনঅ্যারাইভাইল ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য আয়োজনও চূড়ান্ত। ১৬-১৭টি দেশের মধ্যে আফগানিস্তান আছে কি না, সেটি অবশ্য আমিনুল নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে জানিয়েছেন, অসুস্থ থাকায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের প্রধান শাম্মি সিলভা হয়তো ঢাকায় আসবেন না। তবে তিনি অনলাইনের মাধ্যমে সভায় অংশ নিতে পারেন।
জানা গেছে, গত ২০-২২ দিন আগে এসিসি ও পিসিবির প্রধান মহসিন নাকভি বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামকে অনুরোধ করেন সভাটি ঢাকায় আয়োজনের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু এ সময় ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলবে। তা ছাড়া বিসিবি সভাপতির দায়িত্বও আমিনুল মাত্রই নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রথমে নাকভির অনুরোধে তিনি রাজি হননি।
কিন্তু পরে নাকভি আমিনুলকে বোঝান, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের মধ্যে ঢাকায় এসিসির সভা হলে এসিসির সদস্যদেশের প্রতিনিধিরাও খেলা দেখতে পারবেন। সেটা এই অঞ্চলের ক্রিকেটের জন্যই ভালো। তা ছাড়া বাংলাদেশও প্রথমবারের মতো এসিসির এজিএম আয়োজনের সুযোগ পাচ্ছে। পরে আমিনুল তাঁর অনুরোধে সাড়া দিয়ে ঢাকায় এজিএম আয়োজন করতে রাজি হন।