ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯শে আগস্ট ২০২৫, ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২


টেস্ট ক্রিকেটকে দুই ভাগ করতে আইসিসির কমিটি গঠন


প্রকাশিত:
২১ জুলাই ২০২৫ ১৮:২৫

বর্তমান র‍্যাঙ্কিং অনুসারে দুই স্তর হলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে দ্বিতীয় স্তরে খেলতে হবে। ছবি: এএফপি

টেস্ট ক্রিকেটে দুই স্তর চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এই ওয়ার্কিং গ্রুপ চলতি বছরের শেষ দিকে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে, যার ভিত্তিতে টেস্ট ক্রিকেটে দুটি স্তর চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

টেস্টে দুই স্তর চালু হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ র‍্যাঙ্কিংয়ের নিচের দিকের দলগুলো নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত ওপরের দিকে থাকা ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাবে না। ২০২৭ সাল থেকে এই ব্যবস্থা চালুর সম্ভাবনা আছে।

বর্তমানে আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশ হিসেবে টেস্ট খেলতে পারে মোট ১২টি দেশ। এর মধ্যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে ৯টি। তবে নিচের দিকে থাকা দলগুলোর ম্যাচ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় না, আর্থিকভাবে লাভজনক নয়—এমন সব কারণ দেখিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে দুটি স্তর চালুর আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরেই।

বিষয়টি জোর গতি পায় গত জানুয়ারিতে মেয়েদের অ্যাশেজের সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ও ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) আলোচনায়।

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, টেস্টে দ্বিস্তর চালু করতে জোরালোভাবে আগ্রহী ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বোর্ডটি চায়, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড একে অপরের বিপক্ষে প্রতি তিন বছরে দুটি করে সিরিজ খেলুক। যা বর্তমানে প্রতি চার বছরে দুটি হয়। তবে এ ধরনের প্রস্তাবে ইসিবি কিছুটা সংযত থাকতে চাইছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দুই স্তর টেস্টবিষয়ক সেই আলোচনাটিই উঠেছে এবারের আইসিসি বার্ষিক সভায়। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত চার দিনের সভায় দুই স্তর টেস্টের বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রদানের জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।

আট সদস্যের এই কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করবেন আইসিসি নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাহী সংযোগ গুপ্ত। অন্যতম সদস্য হিসেবে আছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ ও ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়ার্কিং গ্রুপে গুপ্ত, গোল্ড এবং গ্রিনবার্গের উপস্থিতি এই ইঙ্গিত দেয়, দুই স্তরের মডেল গৃহীত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এর সাফল্য নির্ভর করবে তাদের প্রস্তাবনার বিস্তারিত বাস্তবায়নের ওপর।

টেস্ট ক্রিকেটে দুই স্তর চালু করতে হলে ১২টি পূর্ণ সদস্যদেশের দুই–তৃতীয়াংশের ভোট দরকার হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্তরে নেমে যেতে হবে—এমন সম্ভাবনা থাকা একাধিক দলকে সম্মতি দিতে হবে।

সে ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে দুটি স্তরের মধ্যে উত্তরণ ও অবনমনব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো। কোনো দলই দীর্ঘ সময় অবনমন অঞ্চলে থাকতে চাইবে না, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে মানদণ্ড ধরলে একটি দলকে উত্তরণের জন্য দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।

আবার ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর বিপক্ষে হোম ম্যাচ আয়োজন করলে যে ধরনের আর্থিক লাভ হয়ে থাকে, দ্বিতীয় স্তরের দলগুলো সে সুযোগ না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে এই দলগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হতে পারে।

বর্তমান আইসিসি র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী ছয় দল নিয়ে স্তর করলে শীর্ষস্তরে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় স্তরে থাকবে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে।

আইসিসির বার্ষিক সভায় একটি নতুন টি–টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ বা বিশ্ব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব তোলা হয়নি।

এর আগে ২০০৮ সালে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডের উদ্যোগে একটি টি–টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ চালু হয়েছিল। তবে সম্প্রচার সংস্থা ইএসপিএন স্টার সম্প্রচার–স্বত্ব ফি দিতে না পারায় ২০১৪ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়।

আইসিসি নিজেদের মতো করে একটি টুর্নামেন্ট চালু করতে আগ্রহী। কিন্তু একই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানায় একাধিক দেশে দল থাকায় এবং একই ক্রিকেটার চার–পাঁচটি দলেও খেলায় পুরো বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

বোর্ড সভা নিয়ে আইসিসি যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, সহযোগী সদস্যদেশ হিসেবে দুটি নতুন বোর্ড যুক্ত হয়েছে। একটি পূর্ব তিমুর ক্রিকেট ফেডারেশন, আরেকটি জাম্বিয়া ক্রিকেট ইউনিয়ন। বর্তমানে আইসিসির সহযোগী সদস্য ১১০টি।