ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩২


কাউন্সিলর নিয়ে না খেলার নির্দেশ, মেয়র জেতাতে মরিয়া আ.লীগ


২৯ জানুয়ারী ২০২০ ২৩:৫৬

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ১৮:৫৭

তাপস (ডানে) আতিক (বামে)

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের দুই মেয়র প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে গতকাল মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দলটির সম্পাদকমন্ডলীর সভায় ‘অলআউট খেলার’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কাউন্সিলর নিয়ে কাউকেই ব্যস্ত থাকা চলবে না।

এ নির্দেশনার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিটি করপোরেশন এলাকার সব সংসদ সদস্যকে নিয়ে আলাদা বৈঠকও করেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ে নজর না দিয়ে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের আশকারা দেওয়ার।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর ওই সভা হয়।

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা আরও জানান, উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের বিজয় নিশ্চিত করতে দলের সবাইকে ‘অলআউট’ খেলার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। কারণ মেয়ররাই সরাসরি দলের প্রার্থী। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষে এই নির্দেশনা দেন।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর দুই সদস্য বলেন, সম্পাদকমন্ডলীর সভায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবাইকে মেয়র প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে ‘অলআউট খেলার’ প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

দলের সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধৃত করে তাদের একজন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি বাইরে থেকে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র মজুদ করছে ঢাকায়। তাই আমাদের সবাইকে সজাগ-সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখনো সময় আছে আপনারা সবাই আরও বেশি সক্রিয় হোন। প্রচারে ভূমিকা রাখুন।

দলের অবস্থান একটাই মেয়র প্রার্থীদের জিততেই হবে। সবাইকে সেই লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য  বলেন, দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নিয়ে দলের নেতাদের না ভাবতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সবার লক্ষ্য একটাই হতে হবে দুই সিটির দুই মেয়রের বিজয়। সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন কাউন্সিলর নয়, মেয়রদের বিজয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, কাউন্সিলরদের বিজয় নিয়ে আমরা ভাবছি না। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর ওই বৈঠকের পর ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার সব সংসদ সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।

তাদের একজন  বলেন, বৈঠকে ঢাকার দলীয় সংসদ সদস্যদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতেই হবে। হারলে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ অনেক সংসদ সদস্য তার আস্থাভাজন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীকে জেতানো নিয়ে ব্যস্ত।

এদিকে জনপ্রতিনিথি হওয়ার ফলে আচরণবিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের প্রচারে নামার সুযোগ হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে দলের নির্দেশনায় বেকায়দায় পড়েছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক সংসদ সদস্য  বলেন, একদিকে প্রচারে নামার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দলের চাপ।

বিষয়টি আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মাঠে নামতে না পারলে ঘরে বসে আর কত কাজই বা করা যায়? আবার দল যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে সেটা পূরণ করাও কষ্টকর। এ বিষয়ে ঢাকার আরেক সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিনই কারও না কারও ফোন আসছে। হুঁশিয়ার করছেন। অভিযোগ তুলছেন। সব মিলে যা-তা অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় যেসব নেতা নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তারা প্রতিনিয়তই সংসদ সদস্যদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ভুল-ত্রুটি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ডেকে সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। দেখা গেছে, সিটি নির্বাচনে বেশি চাপে পড়েছেন সংসদ সদস্যরা। কারণ যার যার নির্বাচনী এলাকায় এবং কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ী করার দায়িত্ব তাদের ওপরই দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

ঢাকার সব সংসদ সদস্যকে মেয়র প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের ওপরই।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য  বলেন, নির্বাচনে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করছেন তারা মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্যর আশকারায় করছেন।

ফলে মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ী করার দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের ওপর দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

যাতে তারা কোনোভাবেই কাউন্সিলরের জয় নিয়ে সিরিয়াস না হয়ে ওঠেন। কারণ আমাদের লক্ষ্য মেয়র। সম্পাদকমন্ডলীর ওই সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী যারা হয়েছেন তাদের পক্ষে কোনো না কোনো দলীয় শক্তি কাজ করছেই। ’