ঐতিহ্যবাহী ও জবাবদিহিতার ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। শুক্রবার অষ্টম দিনের মতো আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগে ছিল উপচে পড়া ভিড়। হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রার্থনা করেন তারা। এ সময় ঢাকা উত্তরে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ‘জবাবদিহিমূলক ঢাকা’ এবং দক্ষিণে নৌকার প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ‘ঐতিহ্যবাহী ঢাকা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সিটি কর্পোরেশনের মতো বিভিন্ন ওয়ার্ডেও গুণগত সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন ভোটারদের।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আপনারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে যদি আমাকে নির্বাচিত করেন, তাহলে আমি কথা দিতে চাই- মেয়র, কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনব। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতি মাসে সবাইকে নিয়ে ‘টাউন হল মিটিং’ করব। যে মিটিংয়ে কাউন্সিলরসহ এলাকার জনগণ উপস্থিত থাকবেন। এলাকার যত সমস্যা, যা সমাধান হয়নি, এলাকার উন্নয়নে আর কি কি করার বাকি আছে, কোন কাজ আগে করতে হবে, অর্থাৎ সমস্যা চিহ্নিত এবং তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে টাউন হল মিটিংয়ে। যার মাধ্যমে জনগণের কাছে আমাদের সবার জবাবদিহিতা থাকবে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মানিকদি কালিবাড়ীর বাউনিয়া এলাকায় গণসংযোগের শুরুতে তিনি এ ঘোষণা দেন।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি আরও বলেন, নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নেই, নৌকার আছে শুধু ফ্রন্ট গিয়ার। আর এ ফ্রন্ট গিয়ার মানে শুধু উন্নয়নের গিয়ার। নয় মাস দায়িত্ব পালনকালে আমরা নানা সমস্যা চিহ্নিত করেছি, সেসব সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারির ভোটে আমি নির্বাচিত হলে ফুটপাত, এলইডি লাইট, ড্রেনেজ, রাস্তাসহ আধুনিক পরিকল্পিত বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু করব ইনশাআল্লাহ।
এদিন কালিবাড়ীর (বালুঘাট) বাউনিয়া মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করে মানিকদি, মাটিকাটা, লালসরাই এলাকায় এবং দুপুরের পর ভাষানটেক, বাইগারটেক, আলব্দীটেক, বারনকোট, দামালকোট ও বিআরবি কলোনি এলাকায় নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে গণসংযোগ করেন আতিকুল ইসলাম।
এসব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে আতিকুল আরও বলেন, বস্তিবাসীও আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাট তৈরি করে দেয়া হবে। আমরা কাজগুলো হাতে নিয়েছি। আমরা মনে করি, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো উচ্ছেদ করা যাবে না। এটার আইনি দিক আমরা দেখব। বস্তিতে যে ক’দিন থাকুক না কেন, তাকে ওই ক’দিনের ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। এরকম একটা ডিজাইন তৈরি করেছি আমরা। কিন্তু ৯ মাসে সবকিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। অনেক কিছু আমরা প্ল্যান করে ফেলেছি। এ সময় নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেককে ভোট দিতে হবে। প্রত্যেককে ভোটের মাঠে আনতে হবে।
নির্বাচনী প্রচারণায় শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, শিশুরাই আগামীর সম্পদ। আমি মনে করি, তাদের জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে। শিশুরা যেন নির্বিঘ্নে পার্কে খেলতে পারে, সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। শিশুদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে, তাদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হলে খেলার মাঠ দিতে হবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিজয়ী হলে এই শিশুদের জন্য বিশেষ নজর দেব।এদিকে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে দিনব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালান আতিকুল ইসলামের সহধর্মিণী ডা. শায়লা সাগুপ্তা ইসলাম। এ সময় মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা-১৫ আসনের ১৬নং ওয়ার্ডের আগারগাঁও, কচুক্ষেত এলাকা থেকে গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেবেন আতিকুল ইসলাম। এরপর ১৪নং ওয়ার্ডের ওয়াসা রোড হয়ে পূর্ব শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর হয়ে বিআরপিএর পেছনে সেনপাড়া পর্বত আদর্শ স্কুল ও এর আশপাশে গণসংযোগ ও পথসভা করবেন তিনি। দুপুরে ৪নং ওয়ার্ডের হারমাইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গণসংযোগ করবেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টায় মিরপুর সনাতন সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
তাপসের প্রচার : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আমিই একমাত্র মেয়র প্রার্থী যিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে চিন্তা করে সুনির্দিষ্ট উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি। আমরা মৌলিক ৫টি উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি। আমাদের পাঁচটি রূপরেখা হল : ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা। এই ৫টির সমন্বয়ে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা হবে। ঐতিহ্যবাসী ঢাকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং এর স্বকীয়তাকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করব।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বংশাল থানার ফুলবাড়িয়ায় কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সামনে নির্বাচনী গণসংযোগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তাপস বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে গণসংযোগ করছি। কোনোরকম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। নেতাকর্মী এবং জনগণের মাঝে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ আছে। ইনশাআল্লাহ আগামী ৩০ জানুয়ারি আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
এ সময় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ও দলটির নেতাদের অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মী ও জনগণের মাঝেও একটি উৎসবমুখর সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। ওনারা অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত, আমরা গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আমরা যে গণসংযোগ শুরু করেছি তাতে ঢাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমরা যে উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি, ঢাকাবাসী তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাকে নির্বাচিত করবে বলে আমি আশাবাদী।
এ সময় তিনি ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলের কাউন্সিলর প্রার্থী মীর সমীর ও মহিলা কাউন্সিলর রুনা হুমায়ুন পারভীনকে পরিচয় করিয়ে দেন।
পরে শেখ তাপস নেতাকর্মীদের নিয়ে পুরান ঢাকার সংশ্লিষ্ট এলাকার অলিগলিতে লিফলেট বিতরণ করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ভোট চান। বঙ্গবাজার এলাকা থেকে তাপস কাজী আলাউদ্দিন রোড হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালান। দুপুরে আরমানিটোলার তারা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি। পরে চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন।
এসব এলাকায় গণসংযোগকালে ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে আমি সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় আবর্জনা থাকবে না। মশক নিধন, সবুজায়ন- এসব আমরা দৈনন্দিন ভিত্তিতে করব। ২৪ ঘণ্টা সিটি কর্পোরেশন এ কাজে নিয়োজিত থাকবে। আমাদের প্রাণের ঐতিহ্যের ঢাকা থাকবে একটি গর্বের জায়গায়।
পুরান ঢাকায় প্রচারে গিয়ে এ এলাকার সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব দিয়ে তাপস বলেন, পুরান ঢাকার সমস্যা নিয়ে আগে কেউ কোনো পরিকল্পনা নেয়নি। আমার এ বিষয়ে বিস্তর পরিকল্পনা আছে। প্রথমেই জলাবদ্ধতা নিরসনসহ ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেব। আমাদের যে মহাপরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার আওতায় ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে সচল করে তুলব। নগরবাসী বাসযোগ্য সুন্দর নগরী পাবে। প্রচারকালে তাপস আবারও প্রথম ৯০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় ব্যাপকভাবে কাজ শুরুর কথা বলেন। আমরা যে মহাপরিকল্পনা নেব সেখানে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা সেভাবে কাজ করতে চাই। যে ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে তা কীভাবে পুনরুদ্ধার, পুনরুজ্জীবিত করতে পারি এবং বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পারি সেটাই মূল লক্ষ্য থাকবে।