প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য ও বাসস্থান
শৈশব হারাচ্ছে তারা শহরের পথে!

শৈশব হারাচ্ছে তারা শহরের পথে!
পথশিশু! পথশিশু বলতে আমাদের চোখের সামনে প্রথমেই যে চিত্রটি ভেসে আসে তা হলো রাস্তায় যারা বসবাস করে তারাই। হ্যাঁ, পথশিশু বলতে সেই সকল শিশুকে বোঝায় যারা ফুটপাত, রাস্তাঘাট বা উম্মুক্ত স্থানে বাস করে। এবং তাদের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটায়। এই শিশুরা পরিবার, নির্দিষ্ট আশ্রয় বা আর্থিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। পথশিশুদের সংঙা দিতে গিয়ে UNICEF এদের স্ট্রিট লিভিং চিলড্রেন এবং স্ট্রিট ওয়ার্কিং চিলড্রেন এই দুই ভাগে ভাগ করেছে। পথশিশুদের নিয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই তবে ১৮ মার্চ,২০২৪ এর এক গবেষণা হতে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ পথশিশু রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৫ দশমিক ৬ ভাগ হতদরিদ্র রয়েছে।
UNICEF এর সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর " সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২" শীর্ষক জরিপ প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালে। সেখানে বলা হয় প্রায় ৭৯ শতাংশ পথশিশু জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মানসিক, শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। তাদের অধিকাংশের পিতৃপরিচয় নেই। তাছাড়া, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় প্রায় ৬২ শতাংশ পথশিশু। দৈনিক গড়ে প্রায় ১০ ঘন্টা ভিক্ষা করে তারা। ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করছে না। এদের মধ্যে ৪২ শতাংশ পথশিশু রাস্তায় বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। বিবিএস প্রকাশিত পথশিশু জরিপ ২০২২ ফলাফল অনুযায়ী প্রায় ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ পথশিশু দরিদ্র। ১২ দশমিক ১শতাংশ কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে এসেছে। এরা বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িত। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, মাদক কারবারি, যৌন ব্যবসা ইত্যাদি অপকর্মের সাথে লিপ্ত। এদের মধ্যে অসুস্থতা অনেক বেশি হয়। পানিবাহিত রোগে ভুগতে হয় বেশি।
এই পথশিশুদের নিয়ে কাজের জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে যেমন : স্ট্রিট চিলড্রেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, জাগো ফাউন্ডেশন ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ পথশিশু এই বিষয়ে অবগত নয়। সরকার, সাধারণ জনগন এবং এই সংগঠন গুলোর উচিত আরো জোরালো ভাবে কাজ করা। এই পথশিশুদের পাশ দাঁড়ানো, তাদের মৌলিক অধিকার এর প্রতি লক্ষ্য রাখা। তাদের জন্য সহজলভ্য ও বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না তাদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় বা মোবাইল স্কুলের ব্যবস্থা করতে হবে, এছাড়াও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। মেধা বিকাশে পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম, তাই তাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। পথশিশুরা যে ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত অবশ্যই তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ করতে হবে। নাচ, গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকার মাধ্যমে তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে। পথ শিশুদের সঙ্গে প্রায়শই আচরণ হয় কিন্তু তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের পরিবর্তে বন্ধুসুলভ আচরণ করে মানসিকভাবে তাদের সমর্থন করতে হবে। তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে হবে, আর্থিক দীনতা তাদের অন্যতম একটি প্রধান বাঁধা তাই তাদের আর্থিক সুরক্ষা দিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তবেই তারা আগামীর জন্য মঙলজনক হবে।
ফাবিয়া হোসেন অথৈ
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
পথশিশু