যেভাবে হওয়া উচিত বিএনপির প্রচার ও প্রসার।

আমাদের জীবন এখন আর খবরের কাগজ বা টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ নয়। আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ইন্টারনেট আমাদের প্রতিদিনের জীবনের চালিকাশক্তি। এই বাস্তবতায়, রাজনীতি ও সামাজিক আন্দোলন আর আগের মতো মাঠকেন্দ্রিক নয়; বরং এখন তা পরিচালিত হয় সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। এই দীর্ঘ সময়ে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যারা প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ। তারা সহজেই রিলস, মিম বা অন্য কনটেন্ট থেকে পরিস্থিতির গভীরতা বুঝতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তি-দক্ষ প্রজন্মের কাছে বিএনপি কতটা প্রাসঙ্গিক?
আজকের দিনটিতে রাজনীতি আর শুধু মাঠের লড়াই নয়, এটি কৌশলের লড়াই। আওয়ামী লীগ তাদের দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতাকালীন নিজেদের প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার, মিম পেজ, এমনকি হাস্যরসাত্মক কনটেন্টের মাধ্যমে তারা নিজেদের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
আবার খেয়াল করলে দেখা যায়, হিরো আলম বা মামুন-লায়লার মতো কনটেন্টগুলোও একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। যখন কোনো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে, তখন এ ধরনের বিষয় সামনে এনে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এটি প্রমাণ করে যে, কনটেন্ট ম্যানিপুলেশন এখন কতটা শক্তিশালী একটি অস্ত্র।
বিএনপি এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তাদের দলীয় কার্যক্রমের ৩১ দফা কিংবা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলো মানুষের সামনে আসছে না। বরং চাঁদাবাজি, দলীয় কোন্দল এবং নেতিবাচক বিষয়গুলোই বেশি প্রচার পাচ্ছে। এমনকি যারা দলের পক্ষ থেকে ভালো কিছু প্রচার করছে, তাদের সোশ্যাল মিডিয়া আইডি পর্যন্ত ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে।
এই অবস্থায়, দলীয় ইমেজ রক্ষা এবং শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়তা:
সোশ্যাল মিডিয়াতে বিএনপিকে একটি শক্তিশালী সাইবার টিম তৈরি করতে হবে। এটি ২-৩ জনের কাজ নয়। পেশাদারদের সমন্বয়ে একটি ডেডিকেটেড টিম লাগবে, যারা কেবল দলের বার্তা ছড়াবে না, বরং নেতিবাচক প্রচারণার পাল্টা জবাবও দেবে।
২. ইমেজ পুনর্গঠন:
মানুষের মনে বিএনপির প্রতি নেতিবাচক ধারণা দূর করতে চাঁদাবাজি, দখলদারি এবং পুরোনো অভিযোগগুলো থেকে দলকে বের করে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।
৩. প্রসঙ্গিক বার্তা ও কৌশল:
দলীয় কর্মকাণ্ড এবং ইতিবাচক উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে প্রচার করতে হবে। অনলাইন প্রজন্মের কাছে যদি বার্তাগুলো পৌঁছানো না যায়, তবে দলীয় অবস্থান আরো দুর্বল হবে।
তাই সময় এখনই। চাঁদাবাজি এবং পুরোনো নেতিবাচক ভাবমূর্তি থেকে বের হয়ে, নতুন প্রজন্মের আস্থা অর্জন করতে হবে। সঠিক ক্যাম্পেইন, পরিকল্পনা এবং আধুনিক পদ্ধতিতেই ভবিষ্যৎ তৈরি করা সম্ভব।
bnp, shipto