ঢাকা বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৯শে ফাল্গুন ১৪৩১


২৪-এর ত্যাগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

তারুণ্যের ভাবনায় বিজয় দিবস


১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০৯

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১৭:১৯

ছবি: আমাদের দিন

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় নতুন এক দেশ। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর গত ৫৩ বছরে বারবার বিঘ্নিত হয়েছে দেশবাসীর গণতান্ত্রিক যাত্রা; বাধা হয়ে এসেছে স্বৈরাচার। ৫ আগস্ট আরও একবার স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে দেশ। সেই প্রেক্ষাপটে এবারের বিজয় দিবস নিয়ে শিক্ষার্থীরা দৈনিক আমাদের দিনকে জানিয়েছেন আশা- আকাঙ্ক্ষার কথা। 

 

বৈষম্যহীন গণতন্ত্রময় স্বাধীনতা উদযাপন

মিনহাজুল ইসলাম

শিক্ষার্থী

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ( বিইউপি ) 

 

 

আজ বাঙালি মন থেকে উপলব্ধি করছে স্বাধীনতার আসল তৃপ্তি। 

১৯৭১ এর পরে বাঙালি জাতি ছিল এক বড় বৈষম্যের শিকার, একটা জনগোষ্ঠী স্বাধীনতাকে শুধুমাত্র তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে মনে করত যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ছিল ঘোলাটে ঝাপসা। স্বাধীনতা অর্জিত হলেও স্বাধীনতার আসল স্বাদ নিতে পারেনি অধিকাংশ বাঙালি জাতি, ভোগ করতে পারেনি গণতান্ত্রিক স্বাদ,ছিলনা বাক স্বাধীনতা। চাইলেই প্রতিবাদ করতে পারত না অন্যায়ের বিরুদ্ধে । ৫ ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে যার ফলে মানুষ ফিরে পায় তাদের আসল স্বাধীনতার সম্মান। ফিরে পায় স্বাধীনতাময় গণতন্ত্র রাষ্ট্র, উদ্ধার করা হয় রক্তে অর্জিত পবিত্র মাতৃভূমি, স্বাধীনতা রক্ষায়,হায়নার থাবা থেকে মুক্ত করতে ঝরাতে হয় আবার রক্ত, রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল রক্ষা করতে ঝরাতে হয়েছিল স্বাধীন দেশেই আবার রক্ত।তবে আজ মানুষ মন থেকে উদযাপন করছে তাদের হারিয়ে ফেলা স্বাধীনতা, প্রকাশ করছে তাদের মুক্তচিন্তা ফিরে পেয়েছে বাকস্বাধীনতা।সবশেষে সবাই আজ চায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একটি বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে তাদের দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে, নতুন রূপে নতুন আঙ্গিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রুপ দিতে।যেখানে থাকবেনা কোনো ধর্মের ভিন্নতা,সবাই পাবে ন্যায়বিচার,তবেই হবে স্বাধীনতার আসল সাফল্য। ভোগ করতে পারবে পুরো বাঙালি জাতি।আত্মতৃপ্তি পাবে সকল শহীদ,গর্বে, গৌরবে ভরে উঠবে সকল মুক্তিযোদ্ধা।

 

 

 

বিজয়ের গানে মিশেছে স্বাধীনতার সুর

সুমাইয়া আলম রিম্মি

শিক্ষার্থী

ইন্সটিটিউশন অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

 

 

আজ, বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে বিজয়ের গান গেয়ে উঠছে। এই গানে মিশেছে স্বাধীনতার সুর, গণতন্ত্রের জয়গান এবং একটি নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন। আমরা স্মরণ করছি মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, তাদের রক্ত আর ঘাম। তাদের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বিজয়ের ৫৩ বছর পর স্বৈরশাসকের পতনের পর একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশে। ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের শোষণ থেকে ছিন্ন হয়েছে বাংলাদেশ । আজ, মহান বিজয় দিবসে, আমরা স্বাধীনতার স্বাদ আরো একবার উপভোগ করছি। এই বিজয় দিবস আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে কারণ এবার আমরা এক মুক্ত দেশের নাগরিক হিসেবে এই দিনটি উদযাপন করছি। আজকের এই বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনা। আমরা সবাই মিলে একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখছি। যেখানে হবে সমৃদ্ধি, সুখ, শান্তি এবং সবার জন্য সমান সুযোগ। এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে আমাদের সকলকে এক হতে হবে। 

 

 

 

প্রকৃত বিজয়ের পথে: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা

 

তাসনিম খান ইশা

শিক্ষার্থী

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

 

 

বিজয় আর স্বাধীনতা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তার চূড়ান্ত ফলাফলই ছিল বিজয়।কিন্তু এ বিজয় সত্যিকার অর্থে কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা এখনো প্রশ্নের বাণে বিদ্ধ।আমরা বহু ত্যাগের মাধ্যমে পেয়েছি এ দেশ। কিন্তু এ দেশে এখনো বহু মানুষ খাদ্য অভাবে এবং পুষ্টিহীনতা সহ নানা সমস্যায় ভুগছে।নানা স্থানে নিম্নবিত্তরা এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও খবর এর কাগজ খুললেই চোখে পড়ছে ধর্ষণ, রাহাজানিসহ নানা স্থানে নারী নিযার্তনের ঘটনা।তাদের জীবনে এখনো বিজয়ের স্বাদ আসেনি।আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ বাস্তবিকভাবেই যেন পরাধীন। পরাধীনতা হতে অবস্থার উন্নতি হওয়ার মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত বিজয়।তাই বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।এ দেশের বিজয়গাঁথা লিখা হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের কালিতে।তাই তো আমাদের এ দেশে বিজয় দিবস আমাদের কাছে এতো মূল্যবান।তাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করে নানা সমস্যা সমাধান করে আমাদের দেশকে এক সুন্দর ও সোনার দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।তবেই আমরা লাভ করতে পারবো প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ।সম্প্রতি আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এর ফলে স্বপ্ন দেখছি বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করার।একজন ছাত্র হিসেবে আমার চাওয়া আমার দেশে যেন আবার কোন স্বৈরাচার না আসে।আমাদের মানবাধিকার যেন রক্ষিত হয়। আর যেনো দেখতে না হয় যে একজন নারী ধর্ষিত হয়েছে। দেশে আর কখনো দুর্নীতি না হোক এ আমার প্র্যতাশা।আমরা সবাই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে পারি এ আমার প্রত্যাশা।

 

 

 

যতবার তোরা রাজাকার হবি ততবার আমরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ফেরত আসবো

 

মৌনতা সাহা

শিক্ষার্থী

অর্থনীতি বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বাঙালির জাতীয় জীবন তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতাযুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছিলেন! আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগে না, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টেকেনা, স্বাধীনতা ব্যতীত তেমনি জাতি কখনো বাঁচতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষও নদীর স্রোতের মতো চিরন্তন সত্যের পথ ধরে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার কাঙ্খিত সূর্য। ভাষা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুথান এবং মুক্তিযুদ্ধ। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলা- দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঁকবদলের ইতিহাস।কিন্তু এবার ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব, যারা স্বাধীনতা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান যারা দেখেননি, তারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থানকে পর্যবেক্ষণ করেছে। ছাত্রদের আন্দোলন কখনো বিফলে যায়নি। যেমনি হয়েছিল ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারা দেশ স্বাধীন করেই ঘরে ফিরেছিল। ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম নয়।

 

 

১৬ ডিসেম্বর ও আমাদের প্রত্যাশা: নতুন বাংলাদেশের দিশা

 

মো. তাসিন আহমেদ মাসুক

শিক্ষার্থী 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আমাদের জন্য শুধুই একটি দিন নয়, এটি একটি জাতির স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়ের স্মারক। তবে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত।দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অসমান উন্নয়ন, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনও আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এবং প্রশাসনিক জটিলতা সাধারণ মানুষের অধিকারকে ব্যাহত করছে। এ অবস্থায় একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলন যদিও সুশৃঙ্খল ও ন্যায়সংগত দাবি নিয়ে এগিয়েছিলো, তবে তা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে বড় ভূমিকা রাখতে পেরেছে। ইতিহাস সাক্ষী, ছাত্র সমাজ বরাবরই পরিবর্তনের মূল শক্তি। তাই, এই আন্দোলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, এবং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি তোলা উচিত।রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে প্রয়োজন সবার জন্য সমান সুযোগ, ন্যায়বিচার, এবং সহনশীলতার পরিবেশ। একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং একটি একীভূত জাতি হিসেবে এগিয়ে চলার প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের সেই সংকল্পই জাগ্রত করে। 


জবি, jnu, CU, BUP, Victory day, বিজয় দিবস, তারুণ্য, ক্যাম্পাস