ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩রা আশ্বিন ১৪৩১


ইন্টারনেট বন্ধের মূল হোতাদের দিয়েই তদন্ত কমিটি : অভিযোগ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের


১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৩৯

আপডেট:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৮

 

ইন্টারনেট বন্ধের মূল হোতাদের দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘ইন্টারনেট বন্ধের কারণ, বিটিআরসি’র দুর্নীতি-অনিয়ম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান, প্রকৌশলী আবু সালেহ ও প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লি. এর ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাবমেরিন কেবলের চেয়ারম্যান টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব এবং দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং কমিশনাররা যুক্ত। অথচ সচিবের পরামর্শে অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে ইন্টারনেট বন্ধের কারণ খুঁজতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা এক প্রকার প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে শাস্তি প্রদানকারী বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম এর সাথে উপদেষ্টা বৈঠক করেন।

তিনি বলেন, এখনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য কমিশনার সেই সাথে পরিচালক এম.এ তালেব দায়িত্বে বসে আছেন। ইতিমধ্যে যদিও আমজাদ হোসেন এবং মাহাদী আহমেদকে ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সেই সাথে ইন্টারনেট বন্ধের কারণ হিসেবে যে সকল ব্যক্তি বিশেষ করে পলক, মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যারা এই অপকর্মের সাথে যুক্ত ছিল তাদের প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ করছি।

তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট চালু হলেও ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইন্টারনেটে ওটিটি প্লাটফর্মে লাইভ টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া এবং সেট টপ বক্স এর একক ব্যবসা আধিপত্য বিস্তারকারী তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব এবং ক্যাবল ব্যবসার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, বিটিআরসিতে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামিট গ্রুপের শেয়ার ট্রান্সফারের নামে ৫ শতাংশ হারে মোট প্রায় ১০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে এই বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান। কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ঠিকই রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এসও ফান্ডের টাকা প্রান্তিক পর্যায়ের কথা বলে লুটপাট করা হয়েছে। বিটিআরসিতে এখনো প্রায় ২৪ জন দুর্নীতিবাজ এবং সিণ্ডিকেটের কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত আছেন। চেয়ারম্যান, কমিশনার এবং এই সকল কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণ করে শাস্তির আওতায় না আসলে বিটিআরসি সংস্কার হবে না। আইসিটি মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি জাতীয়ভাবে করা অত্যন্ত জরুরী।

সংবাদ সম্মেলনে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, হযবরল কমিটি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতির সাথে পরিহাস করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইন্টারনেট বন্ধের মূল তদন্ত করতে জাতীয় পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন জরুরী এবং যারাই এর সাথে যুক্ত তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের ফলে গুজব আরো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের মৌলিক অধিকার যা বন্ধ করে মানবাধিকার লংঘন করেছে সরকার। ভবিষ্যতে যাতে আর ইন্টারনেট বন্ধ না হয় তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান খালিদ আবু নাসের বলেন, ওটিটি ব্যবসাকে বন্ধ করে আকাশ এবং সেট টপ ব্যবসা শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের লঙ্ঘন। তিনি এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কমিশনকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভির হাসান জোহা বলেন, গুজব যেমন আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে। বর্তমান সরকারের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফ্যাক্ট চেক করা। যাতে করে প্রকৃত তথ্য জানা এবং বোঝা যায়। সাইবার নিরাপত্তার চরম হুমকিতে আছে বাংলাদেশ। তাই দ্রুত সাইবার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সংগঠনের প্রযুক্তিবিদ প্রকৌশলী আবু সালেহ আহমেদ বলেন, আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। দলীয়করণের মাধ্যমে ইন্ডাষ্ট্রিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

শাশ্বত মনির বলেন, দেশে চলমান অস্থিতিশীলতার মধ্যে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন টেলিখাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জোরালো আওয়াজ তুলেছে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রচারের জন্য গণমাধ্যমকর্মী ভাই-বোনদের অনুরোধ করছি।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা:
১) কোন অবস্থায় কোন পরিস্থিতিতেই আর ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধ করা চলবে না। ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

২) ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওটিটি লাইভে টেলিভিশন এবং বিনোদন দেখতে দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

৩) সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করতে হবে।

৪) বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের কে পদত্যাগ নয় আইনের আওতায় আনতে হবে। সিন্ডিকেট এবং দুষ্টচক্র এবং দুর্নীতির সাথে যুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে দ্রুত অপসারণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

৫) বিটিআরসিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠা হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কোনভাবেই কাম্য নয় এবং একটি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।

৬) আমরা যে সকল দুর্নীতির কথা বলেছি এবং ইন্টারনেটের বন্ধের কারণের কথা বলেছি তা তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্তের জন্য যে কমিটি গত ১১ আগস্ট গঠন করা হয়েছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নতুন করে মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বিশেষজ্ঞ একটি কমিটি গঠন করতে হবে।

৭) মোবাইল এবং ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি খাতে কর কমাতে হবে।

৮) ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে প্যাকেজের মেয়াদ তুলে দিতে হবে।

৯) মধ্যস্বত্ত্বভোগী লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাতিল করতে হবে।

১০) দলীয়করণ নয় মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবা খাতে নিয়োগ দান করতে হবে।


ইন্টারনেট বন্ধের মূল হোতাদের দিয়েই তদন্ত কমিটি : অভিযোগ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের