পুঁজিবাদী আগ্রাসনের ভবিষ্যত কী?

"ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি"
সুকান্ত ভট্টাচার্য এর সেই গভীর দৃষ্টিপাত বিংশ শতাব্দীর গরীব, অসহায়দের যে করুণ আর্তনাদ তার বর্ণনা দিতে যেয়ে তিনি এভাবে ব্যক্ত করেছেন কবিতার ছন্দে।
তখনকার গরীবরা এতটা অসহায় ছিলো যে তারা অনাহারে থেকে চাঁদের দিকে অবলোকন করে ভাবত এটা শুকনো রুটি,ভোজনের কি তীব্র আকাক্ষা!
সেটা সে সময়কার আর্তনাদ বটে কিন্তু আজ আমরা আহ্লাদিত হয়ে বলতে পারি আমাদের দেশ আগের থেকে শিক্ষা-দীক্ষা,অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত উন্নয়নে রোল মডেল ছুঁই, ছুঁই আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে গর্ব করে পরিচয় দেই আমাদের অবধানের প্রশংসা বলে, এটাই আমদের সোনালি অর্জন।
কিন্তু আশাহত হয়ে বলতে হয় যে আমাদের দেশে এখনও অনেক মানুষ রয়েছে দারিদ্র্য। এই হারটা হলো ২০.৫ শতাংশ যা পূর্বে ছিলো ২১.৮ শতাংশ যা ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে তবে এটি ক্রমহ্রাসমান এবং এদের মাঝেও রয়েছে হতদরিদ্র যারা আজ তাদের জীবনধারণ (নুন আনতে পান্তা ফুরায়) তীব্র ক্লেশে কাটাতে হচ্ছে এর পরিমানটা বাংলদেশে ১৬.১৯% তবে এটা ২০৩০ এ হবে ০.৮৩ (বিশ্ব ব্যাংক রিপোর্ট অনুযায়ী) তবে আশার বিষয় হচ্ছে এটিও ক্রমহ্রাসমান।
দারিদ্র্যের এই দুষ্ট রুপরেখা এখানেও দেখতে হতনা এটি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সুগঠন ও সুকৌশল অভাবের ফলাফল এটি একদিনে হয়নি এটি আমদের কিছু লোভী পুঁজিবাদীদের আগ্রাসনে আজকে আমরা সত্যিকার্থে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছি যার ফলাফলে আমরা শ্রেণিবৈষম্যের যুগে জীবন পার করছি।
আমরা এতোটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি যে আমাদের দেশ আগামী দশ বছরে মধ্যে আজকের সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো আরো তীব্র ও প্রকট হয়ে রুপ নেবে আমাদের মাঝে, যেমন- যদি বিষয়টি আরো পরিস্কার করি সেটি হচ্ছে আমাদের দেশ ছোট দেশ অনেক জনসংখ্যা এখানে যা রিসোর্স রয়েছে তা থাকা সত্বেও আমরা অপূর্ণতায় ভোগি তার কারণ কি জানেন সঠিক পরিকল্পনার অভাব,সঠিক প্রক্রিয়াকরণের অভাব যেটি আমরা সরকারের দোষারোপ দিয়েই এড়িয়ে যাই কিন্তু আমরা কখনো ভেবেছি আরো একটি বড় সমস্যা লোভী, দূ্র্ণীতিপরায়ণ কিছু অসাধু ধনিকশ্রেণীর লোক যারা সরকারকে ভ্যাটের দোহাই দিয়ে চাপে রেখে নিজেদেরকে এলিয়েন ভেবে দেশের নিচুস্তরের মানুষকে মানুষ বলে পাত্তাই দেয়না অথচ তারা এ দেশেরই নিম্নশ্রেণীর মানুষের সস্তা শ্রমেই নিজেদেরকে আজ সফল ব্যবসায়ী আর সমাজের উঁচুস্তরের প্রাণীতে পরিণত করেছে।
এখানেই শেষ নয় আরো ভয়ংকর যে বিষয়টি রয়েছে সেটি হচ্ছে যেদিন আমি একটি জাতীয় পত্রিকায় ধনী আর সাধারণ মামুষের আয় ব্যয়ের পরিসংখ্যানটি দেখেছিলাম সেদিন আমার চোখ কপালে উঠেছিল,আমি খুব চিন্তিত হয়ে পরলাম আমাদের আমজনতার ভবিষ্যৎ কী?
পরিসংখ্যানটি ছিল-দেশে সবচেয়ে গরীব ২০ লাখ পরিবারের মাসিক আয় ৭৪৬ টাকা যেখানে সবচেয়ে ধনী ২০ লাখ পরিবারের মাসিক আয় ৮৯০০০ টাকা প্রায় ১লাখ টাকা যা গরীবদের তুলনায় ১১৯ গুন বেশি আয় করে ধনীরা। এখানেই শেষ নয় বিবিএস বলেছে এটা ভয়ংকরভাবে ক্রমবর্ধমান।
এখন মাথাটা ঠাণ্ডা করে ভাবুন যেখানে আমার, আপনার মতো যারা শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নিরক্ষর যারা কর্মপ্রত্যাশী তাদের অবস্থানটা কোথায় দাঁড়াবে,কখন শেষ হবে এই বৈষম্যের খেলা!
ব্যক্তিগত পরামর্শ হলো,পুঁজিবাদীর আগ্রাসনের এই সিস্টেমে বহাল থাকলে সমস্যা প্রকট হবে এটা একটা লিমিটের মাঝে এনে আয় সীমা নির্ধারণ করা উচিৎ যেখানে দেশের মেজোরিটি মানুষও জীবনের নিরাপত্তা পাবে, পাবে বৈষম্যহীন সমাজ।
পরিশেষে বলব,আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি আমরা পরিশ্রমী,সংগ্রামী জাতি আমাদের ইতিহাস তাই বলে আর আমাদের চৌদ্দ পুরুষ তারাও খেটে গায়ের ঘাম ঝরিয়ে মাঠে ফসল ফলিয়েছ তাদের অবধানেই আমরা আজ বিশ্বের বুকে রোল মডেল এবং তারই প্রতিচ্ছবি আজকের সোনালি,শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলাদেশ। হেরে যেতে নয় এ দেশের মানুষ জিততে শিখেছে হারতে নয়।ভালো থাকুক এ দেশের প্রতিটি শ্রমিক।
লেখক-
মো.জুনাইদুল ইসলাম
সমাজকর্ম বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।