ঢাকা সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ২২০ শতাংশ!


১২ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৩৮

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০০:৫৭

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছে। বিশেষত মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বাড়ছে, বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এ হার বেড়েছে ২২০ শতাংশ।

গতকাল রবিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ‘মেয়েদের স্কুলে ফেরাতেই হবে’ শিরোনামে ব্র্যাকের আহ্বানে এক ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ডিজিটাল ক্লাস করানোর ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার মানও বেড়েছে। শুধু সরকার নয়, বেসরকারি পর্যায়েও অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে ক্লাস নিচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের যে এই পরিস্থিতিতে স্কুলে যেতেই হবেএমনটি ভাবা যাবে না। অনেক দেশে তো স্কুল খোলার পরে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদেরও বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

কন্যাশিশুদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রতিটি ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। তাই ভুয়া সনদ দেখিয়ে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না। আর স্কুলের পাঠক্রমে নারী অধিকার, যৌন হয়রানি প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। শুধু কভিড সংকট নয়, আগামীর সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছি আমরা।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, ‘অনেক পরিবার মনে করছে, মেয়েমানুষের এত পড়াশোনার কী দরকার? অনেক সময় মা-বাবা জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মহামারীটির শুরুর দিকে, কী করা উচিত সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিষ্কার ছিল না। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে ৯৯৯-এ ডায়াল করে সহায়তা পেতে পারেশিক্ষার্থীদের এ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আমরা স্কুল প্রোগ্রামগুলোতে কাজ করছি। যে ভালো স্পর্শ, মন্দ স্পর্শ বিষয়ে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছেএজন্য মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘স্কুল বন্ধ রাখার কারণে ছাত্রদের ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষকরাও বিপদে আছেন। এই মহামারীটা আমাদের সামনে একটা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসের মতো। আমাদের ভুলভ্রান্তি ও করণীয় সম্পর্কে নতুন করে শিখতে পারছি। সবাইকে স্কুলে ফেরানোর আগে তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তবতা যাচাই করে দেখতে হবে।’

তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাতেও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, ছাত্রদের টিফিন প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা দরকার।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘টানা স্কুল বন্ধ রাখলে শিশুরা যা শিখেছে, তা-ও ভুলতে বসেছে। পাকিস্তানে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ মাস স্কুল বন্ধ রাখার পর শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্রে ১৪ মাস পিছিয়ে গেছে। আমাদের দেশে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। স্কুলগুলো হুট করে না খুলে, পর্যায়ক্রমে মনিটরিং করে খুলতে হবে, যেমন যেসব জেলায় সংক্রমণ কম সেসব স্থানে আগে খোলা। এ বিষয়ে কাজ করতে এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রস্তুত।’

সংলাপ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারী অধিকারকর্মী এবং সংসদ সদস্য এরোমা দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার তাহেরা জাবীন, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি, ডেভেলপমেন্ট সাইমন বাকলি। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী প্রমুখ।