ঢাকা বুধবার, ১৪ই মে ২০২৫, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


কখন কে ধরা পড়ে বলা যায় না: প্রধানমন্ত্রী


৩০ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:১৭

আপডেট:
১৪ মে ২০২৫ ০৮:১৭

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) তদন্ত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাকিবের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করার নেই। তিনি বলেন, বিসিবি সবসময় সাকিবের সঙ্গে আছে এবং তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

আজারবাইজান সফরের বিস্তারিত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অস্থিরতা, ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, পেঁয়াজ বাজার, গত সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় যত কঠিনই হোক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলবে জানিয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রীর এ সংবাদ সম্মেলনের কিছু সময় পর ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে তা গোপন করায় সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি, যার মধ্যে এক বছরের শাস্তি দোষ স্বীকার করায় স্থগিতও করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে। ওর যেটা ভুল হয়েছে, যখন যোগাযোগ করা হয়েছে তখন বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। সে কথাটি আইসিসিকে জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে জানানো উচিত ছিল। সে এটাই ভুল করেছে। আইসিসি যদি অবস্থান নেয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের তো খুব বেশিকিছু করণীয় থাকে না। আমাদের দেশের ক্রিকেটার এবং খেলোয়াড় হিসেবে তার একটি অবস্থান আছে। সে ভুল করেছে, এটা ঠিক। সে সেটা বুঝতেও পেরেছে। আর বিসিবি বলেছে, তার পাশে তারা থাকবে। এর চেয়ে খুব বেশি যে করণীয় কিছু আছে, তা কিন্তু না।’

ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের যদি দাবি-দাওয়া থাকত, তাহলে আগেই জানাতে পারত। বিসিবিকে জানাতে পারত। কিন্তু সেটা করেনি। কথা নেই বার্তা নেই, ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আমি এর আগে কখনো শুনিনি ক্রিকেট খেলোয়াড়রা ধর্মঘট করে। আর ধর্মঘট করতে হলে তো আগে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে, একটা সময় দেয়, নোটিস দেয়, তারপর করে। পরে আলোচনা হয়েছে, তারা গেছে এবং মিটমাট করা হয়েছে সে সমস্যা। এ সমস্যা আর নেই।’

ক্রিকেটকে নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন কেন : কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দেখতে গিয়ে তিস্তা নদী নিয়ে কূটনৈতিক কোনো আলোচনা হবে কি না– এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ক্রিকেটকে নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে ফোন করেছিল সৌরভ গাঙ্গুলি। সে একজন বিখ্যাত খেলোয়াড়, ভারতের ক্যাপ্টেন ছিল, এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান। সে ফোন করে আমাকে কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখার দাওয়াত দিয়েছে। আমি বলেছি, আমি আসব।

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার জয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় : সম্পªতি বরিশালে গিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির এক অনুষ্ঠানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন দলটির সভাপতি ও ওই নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে জয়ী রাশেদ খান মেনন। সংবাদ সম্মেলনে তার নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জোটের নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, তার মনে তো কষ্ট থাকতেই পারে। কিন্তু এটাও ভাবতে হবে তিনি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে, তার জয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে জোটের মুখপাত্র নাসিম সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন, আমার বক্তব্য আছে কি না।

আমি বলেছি, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এসব বিষয় নিয়েই যদি পড়ে থাকি তাহলে দেশের উন্নয়নে কাজ করব কখন?’ শেখ হাসিনা এ সময় আরও বলেন, ‘জনগণ যদি ভোট না দিত, আমাদের পক্ষে না থাকত, তাহলে আমাদের সমর্থন থাকত না। তাদের (বিএনপি) ভোটবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। আমাদের জনসমর্থন ছিল। এবারের নির্বাচনের পর জনগণ, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। শুধু আওয়ামী লীগের না, বিএনপির ব্যবসায়ীরাও আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। কারণ আমরা সবার জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিতে পেরেছি।’

ভয় পেলে অভিযানে নামতাম না : চলমান অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভয় পেলে এ অভিযানে আমি নামতাম না। আমি যখন নেমেছি, তখন কে কী করে, কোন দলের– সেটি আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। আমার বাবাকে দেখেছি কীভাবে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই ভয় এ শব্দটা আমার ছোটবেলা থেকেই নেই। ভয় পাওয়ার লোক আমি না।’

বিএনপির অভিযোগ, শুদ্ধি অভিযান নিয়ে আইওয়াশ করা হচ্ছে। মূল অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আসল দুর্নীতিবাজদের দুজন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে শাস্তি পেয়ে গেছেন। বিএনপির আরও নেতা আছেন যারা অপরাধী, পর্যায়ক্রমে সবাই শাস্তি পাবেন। তিনি বলেন, ‘আইওয়াশ করতে যাব কিসের জন্য? আমি তো আমার আপন-পর কোনো কিছু দেখিনি। অপরাধজগতের সঙ্গে যারা জড়িত, সে যেই হোক, তাকে ধরেছি। আইওয়াশের ব্যবসাটা বিএনপি ভালো জানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপেক্ষা করেন, আইওয়াশ নাকি দেখা যাবে।’

ক্যাসিনো নিয়ে অভিযানের আগে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ আসেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে খবর চলে এসেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং যাকে দিয়ে করলে যথাযথ হবে, তাকে দিয়েই করিয়েছি।’ অনেক গণমাধ্যম থাকতেও কেউ এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করেনি বলে জানান তিনি। এছাড়া বলেন, কখন কে ধরা পড়ে বলা যায় না।

১০০ জনের তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নিতে। আর কতজনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে– জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এটা তিনি এখন বলবেন না। এছাড়া জানান, কোনো এক পত্রিকার সম্পাদক এক ব্যাংকের এমডিকে ফোন করে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে টাকা চেয়েছেন, নয়তো তাদের বিরুদ্ধে লেখা হবে। এসবও বের হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পেঁয়াজ কিন্তু পচেও যায় : পেঁয়াজের দাম নিয়ে এক প্রশ্নে জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা পেঁয়াজ মজুদ করছে তারা কতদিন ধরে তা রাখতে পারে, পেঁয়াজ কিন্তু পচেও যায়। বেশি রাখতে গিয়ে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গিয়ে তাদের লোকসান হবে। লাভ হবে না। এটাও বাস্তবতা।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘পেঁয়াজের দরজা খুলে দেওয়া হলো। সমস্যা থাকবে না, হয়তো সাময়িক।’ তিনি বলেন, ‘বাইরে কিন্তু পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। এ সমস্যা থাকবে না। পেঁয়াজ চলে আসছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ১০ হাজার টন চলে আসবে, তারপর ৫০ হাজার টন চলে আসবে।’

মুজিব বর্ষে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা যাবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না। এর পুরো প্রক্রিয়াটাই হাইলি টেকনিক্যাল বিষয়। সেতুর নিচের অংশে ট্রেন, ওপরে অংশে গাড়ি চলবে। এটার টেকনোলজিটাই ভিন্ন।

১২০টি উন্নয়নশীল দেশের জোট ন্যামের সম্মেলনে যোগ দিতে ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর আজারবাইজান সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশটির রাজধানী বাকুর ‘কংগ্রেস সেন্টার’-এ ২৫ ও ২৬ অক্টোবর দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন হয়। অন্য সদস্য দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ন্যাম সম্মেলনে যোগ দেন।