নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ভুয়া রিপোর্ট ও চিকিৎসা প্রতারণা: এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর চিকিৎসা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসকরা ভুয়া রিপোর্টের মাধ্যমে রোগীদের ভুল চিকিৎসা প্রদান করে এবং অপারেশনের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।
ঘটনার শুরু: ২১ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকে এক ব্যক্তি (এনামুল হক) তার স্ত্রীর তীব্র পেট ব্যথা নিয়ে ডাক্তার মোঃ আখেরুজ্জামান আখের সাহেবের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, কিছু টেস্ট এবং আলট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেছিলেন, তার স্ত্রীর 'সিস্টাইটিস' (Cystitis) হয়েছে এবং কিছু প্রাথমিক ঔষধ দেওয়া হয়। কিন্তু, ঔষধ খাওয়ার পরেও ব্যথা কমেনি এবং পরবর্তী দিন রবিবার তার স্ত্রীর অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার পর, আবার নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকে যেতে হয়। সেখানে ডাক্তার মোঃ আমজাদ হোসেন (MBBS) নতুন করে আলট্রাসনোগ্রাফি, এক্সরে এবং অন্যান্য টেস্ট করিয়ে জানান, তার স্ত্রীর 'এপেন্ডিসাইড' (Appendicitis) হয়েছে এবং অপারেশনের বিকল্প নেই।
অপারেশনের পরামর্শ: ডাক্তার আমজাদ হোসেন রোগীকে দ্রুত অপারেশনের জন্য ভর্তি করতে বলেন এবং বলেন, "আমি আজ আছি, ভর্তি করলেই আমি অপারেশন করে দেব।" এ সময় রোগী সিদ্ধান্ত নিতে কিছু সময় চাইলেও, পরবর্তীতে কিছু ঔষধ লিখে দেয়া হয়।
দ্বিতীয় পরামর্শ: রোগী তখন আরও সতর্ক হয়ে ওঠেন এবং তার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ নেন। তারা তাকে বলেন, অপারেশন করার আগে অন্য কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে টেস্ট করানো উচিত।
এরপর, রোগী কুড়িগ্রামের গ্রীন লাইফ ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তার মোঃ অমিত কুমার বসু (MBBS) এর কাছে পরামর্শ নেন। ডাক্তার অমিত কুমার বসু বলেন, "এপেন্ডিসাইড নয়, আপনার স্ত্রীর প্রস্রাবে হালকা ইনফেকশন হয়েছে, যা সাধারণ ঔষধের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যাবে।"
এদিকে, রোগী রংপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ মাহমুদুল আলম সৈকত (MBBS) এর কাছেও পরামর্শ নেন। তিনিও একই পরামর্শ দেন, অর্থাৎ, এপেন্ডিসাইড নেই, ইনফেকশন রয়েছে এবং সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমে এটি ঠিক হয়ে যাবে।
ভুয়া রিপোর্ট ও চিকিৎসা প্রতারণা: এই ঘটনায় রোগী ব্যাপকভাবে হতাশ হয়েছেন এবং অভিযোগ তুলেছেন, নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকের রিপোর্টে ভুল ছিল। তিনি বলেন, "কিভাবে তারা ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে একজন সুস্থ মানুষকে অপারেশনের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে?"
রোগীর অভিযোগ, নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকের মেশিন ও অপারেটরদের মাধ্যমে এসব রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছিল, যা রোগীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
রোগীর সতর্কীকরণ: এই ঘটনায়, রোগী স্থানীয় জনগণের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন, "আপনারা নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকের রিপোর্টে বিশ্বাস করে অপারেশনের মতো বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।"
এই ঘটনা নাগেশ্বরী সেন্ট্রাল ক্লিনিকের চিকিৎসা প্রথা ও রিপোর্টের প্রতি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পরামর্শ নেওয়ার গুরুত্ব আবারো প্রমাণিত হয়েছে।