নেছারাবাদের এক প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার জিরবাড়ি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আমির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা ও শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ওই শিক্ষক প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ মার্চ নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ী গ্রামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নন-এনডিডি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওই গ্রামের আমির হোসেন। খাতা-কলমে শিক্ষকের সংখ্যা ২১ জন, কর্মচারীর সংখ্যা ১৭ জন, ভ্যানচালকের সংখ্যা দুজন ও ভ্যানের সংখ্যা দুটি হলেও বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক জানান, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ছাত্রছাত্রী অনুযায়ী ৩২ জন শিক্ষক নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৭০ জনের বেশি শিক্ষক নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন। নিয়োগের নামে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া প্রায় ৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুটি ভ্যান তৈরি করলেও গোপনে তা বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রতারণার মাধ্যমে আমার কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে প্রথম ধাপে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে বিএসএড পরীক্ষার কথা বলে ২৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমার একটি বেসরকারি কারিগরি কলেজে চাকরি হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে ওই কলেজেও যোগ দিতে দেননি।
সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাত মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তাকে ফোন করলেও তা রিসিভ করছেন না। নিয়োগের সময় আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন আমির হোসেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা আদায় করে কাউকে হিসাব দিতেন না। এখন তিনি আত্মগোপনে থাকায় ভুক্তভোগী শিক্ষকরা আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: জাহারুল ইসলাম বলেন, এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন এককভাবে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের নামে একটি যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও লেনদেন করতেন তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। নিয়োগ সংক্রান্ত লেনদেন ও অফিসিয়াল ডকুমেন্টস সম্পর্কে তথ্য আমাকে কিছুই জানাতেন না।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আমির হোসেনের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি যা করেছি বিদ্যালয়ের স্বার্থেই করেছি। একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাপক টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়। টাকাগুলো বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। আর নিয়োগপত্র ব্যতীত আমি কাউকেই নিয়োগ দিইনি। ছাত্রছাত্রীদের ভ্যান বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলটি দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকায় ভ্যানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, তাই দুটি ভ্যান ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি।
নেছারাবাদ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তপন বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ফলোআপ করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: রায়হান মাহামুদ বলেন, লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। শুনেছি দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।