ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি,

শক্তিশালী হচ্ছে ‘৯৯৯’


১৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৪৪

আপডেট:
১৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৪

বরিশালের একটি এলাকায় একজন ইয়াবা বিক্রি করছে এমন অভিযোগ জানাতে নুরজ্জামান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাদের (৯৯৯) কাছে ফোন করে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানিয়ে দিলে থানা থেকে জানানো হল তারা টহল গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার আধাঘণ্টা পর অভিযোগকারী আবার ফোন করে জানান ঘটনাস্থলে পুলিশের কেউ যায়নি। কিন্তু টহল পুলিশ বলছে তারা গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন সুস্পষ্ট কোনো জবাবদিহিতা মিলছে না, অন্যদিকে অভিযোগকারীও সহজে সেবা না পেয়ে আস্থা হারাতে চাইবে ৯৯৯ কল সেন্টারের প্রতি’, বলছিলেন জাতীয় জরুরি সেবা কল সেন্টার ‘৯৯৯’ এর সদরদফতরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলছিলেন, “এ ধরনের ঘটনা দু’একটা নয়; প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তাই এ ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে এবং ভুক্তভোগীদের কাছে দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতে ‘৯৯৯’ এ যুক্ত করা হয়েছে নতুন একটি ডিভাইস। যেটির মাধ্যমে দ্রুত এবং সহজেই ভুক্তভোগীর কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।” সেই সঙ্গে টহলরত পুলিশ সদস্যদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

 

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের সদরদফতর সূত্রে জানা যায়, অল্প সময়ে দ্রুত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে দেশের মেট্রোপলিটন থানাগুলোর টহল গাড়িতে যুক্ত করা হচ্ছে মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি) নামে একটি নতুন ডিভাইস। এটি সংশ্লিষ্ট থানার গাড়িতে স্থাপন করা হলেও এর মূল নিয়ন্ত্রণে থাকবে জাতীয় জরুরি সেবা সদর দফতর। ডিভাইসটি ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে টহল গাড়ির গতিপথ ও অবস্থান জেনে ভুক্তভোগী নাগরিকদের দ্রুত সাহায্য করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সদর দফতর।

প্রাথমিকভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা এবং বরিশালসহ ৬টি মেট্রোপলিটন এলাকার মোট ৯২টি টহল গাড়িতে এমডিটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। এসব ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশের ছয়টি মেট্রোপলিটন এলাকার ৩৫০টি স্থানীয় থানায় ডেসপাস ডেস্ক স্থাপন করার কাজও শেষ পর্যায়ে। এ ডেসপাস ডেস্কের প্রতিটি থানায় একটি কম্পিউটার ও দুটি মনিটর থাকবে। এসব কম্পিউটার এমডিটি ডিভাইসের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। যা দিয়ে সহজেই টহল গাড়ির গতিবিধি ও অবস্থান জানা যাবে। তবে রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে আপাদত এ ডিভাইস যুক্ত করা হচ্ছে না। ক্রমান্বয়ে এ কার্যক্রম সফল হলে সেসব থানার টহল গাড়িতেও এমডিটি ডিভাইস স্থাপন করা হবে।

জাতীয় জরুরি সেবার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে চালু হবে এ সেবার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। আর এটি চালু হলে নাগরিকদের সহযোগিতার জন্য ৯৯৯ থেকে থানায় ফোন না দিয়ে সরাসরি পুলিশের টহল গাড়িতে কল করা যাবে। সেই সঙ্গে কোনো ভুক্তভোগী নাগরিক জরুরি কল সেন্টার ৯৯৯ এ কল করার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি যে এলাকায় অবস্থান করছেন সে এলাকার তথ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার টহল গাড়ির পুলিশের কাছে চলে যাবে। এসময় ওই টহল গাড়ির পুলিশ সদস্যরা এমডিটি ডিভাইসটির মাধ্যমে স্থানীয় থানার ডেসপাস ডেস্ক এবং জাতীয় জরুরি সেবা সদর দফতরের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে ভুক্তভোগী নাগরিকের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সংযুক্ত থাকতে হবে। কোনোভাবেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। এতে একদিকে দ্রুত সহযোগিতা পাবে নাগরিকরা, অন্যদিকে টহল গাড়ি কোথায় আছে এবং সহযোগিতায় কোনো গাফলতি করছে কিনা সেটিও মনিটরিং করা যাবে।’

৯৯৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমডিটি এমন একটি ডিভাইস যেটির ওপর কোনো আঘাত কিংবা শক্ত কিছুর উপরে পড়লেও ভাঙবে না। এটি দেখতে ট্যাবের মত। কিন্তু অত্যন্ত মজবুত। টহল গাড়ি যে অবস্থায় চলুক না কেনো এটির কোনো ক্ষতি হবে না সহজে। আর এটির ইন্টারনেট সংযোগ সর্বনিম্ন টুজি থেকে সর্বোচ্চ যেকোনো ইন্টারনেটে ব্যবহার ক্ষমতা রয়েছে। যেকারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’


জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ এর সদর দফতরের পুলিশ সুপার (এসপি) তবারক উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জনবল ও অবকাঠামোগত নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ইতোমধ্যে ‘৯৯৯’ সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। তাই এটি যেন সহজেই দ্রুত নাগরিকদের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে পারে সেজন্য আমরা এমডিটি ডিভাইস স্থানীয় থানার টহল গাড়িতে যুক্ত করেছি। যা আর দু’একদিনের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। এটি চালু হলে ভুক্তভোগী নাগরিকরা কল করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সদর দফতরে যিনি কলটি ধরবেন তিনি ওই ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে তার আশপাশের টহল গাড়িতে বার্তা পাঠিয়ে দিবেন মুহুর্তের মধ্যে। এরপর বাকি কাজ করবে সংশ্লিষ্ট থানার ডেসপাস ডেস্ক। কিন্তু সদর দফতর থেকে ওই নাগরিক যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হবে ততক্ষণ টহল গাড়ি ও ডেসপাস ডেস্ক কাজ করতে থাকবে। আর সেটি মনিটরিং করবে আমাদের প্রধান দফতর।’

তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই সরকারের অন্যতম একটি সফলতা। কারণ দেশের নাগরিকরা অতিদ্রুত যেকোনো বিপদে সবার আগেই ৯৯৯ এ কল করলেও দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে পারছিলাম না আমরা। তাই উন্নত বিশ্বের আদলে আমরাও এমন একটা প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি যেটির মাধ্যমে নাগরিকরা আস্থার সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা নিতে পারে। এর ফলে আগে যেখানে ভুক্তভোগী নাগরিকের কাছে টহল পুলিশ পৌঁছ হতে লেগে যেতে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা। এখন সে সময়ের আগেই টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে যেতে পারবে।’ আর ডিভাইসটি ব্যবহার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) ও উপ পরিদর্শক (এসআই) সদস্যদের সদর দফতরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।