ঢাকা বুধবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২রা আশ্বিন ১৪৩২


ডাকসু নির্বাচন

প্রচারণায় হরহামেশাই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৪৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করছেন কয়েকজন সমর্থক (ফাইল ছবি)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট বাড়াতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে প্রার্থীদের মধ্যে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থিত প্যানেল এবং কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের ভোট আদায় করে নিতে হরহামেশাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন।

প্রচারণার শুরুর দিকে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের পড়ার টেবিলে প্রচারণা থেকে শুরু করে শেষের দিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদের ক্লাসরুমে গিয়ে প্রচারণাসহ শিক্ষার্থীদের ভোট আদায়ে ব্যাপকভাবে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে এবারের ডাকসু নির্বাচনে ব্যাপক টাকার ছড়াছড়ি করছেন প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ কয়েকটি দলীয় ছাত্র সংগঠন ও কতিপয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে। শিক্ষার্থীদেরকে হলে এবং হলের বাইরে খাওয়ানো, টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে উপঢৌকন দিয়ে ভোট আদায় করে নিচ্ছেন প্রার্থীরা।

প্রতিবেদকের সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাজধানীর নাজিরা বাজার, ধানমন্ডি ও কাওরানবাজার এলাকার বড় বড় রেস্তোরাঁগুলোতে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কিছু জায়গায় সরাসরি প্রার্থীরা গেলেও বেশির ভাগ জায়গায় অন্যদের কাছে টাকা দিয়ে ভোটারদের খাওয়াচ্ছেন প্রার্থীরা।

ডাকসু নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে এমন অভিযোগ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এক্টিভিস্ট আব্দুল্লাহিল বাকি তার ফেসবুক পোস্টে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘একবার ইউসুফ সরকার (ইউনুস সরকার) বিদ্যাশ গিয়া এক চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে কইছিলো, বঙ্গদেশের মানুষ ট্যাকার বিনিময়ে ভোট বেইচা দেয়, এই দ্যাশে নির্বাচন করা অনেক কঠিন। সেই কথা শুইনা সবাই গেলো ক্ষ্যাইপা।’

‘এক বছরের ডাকসু নির্বাচনের ভোটাররা রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত নাজিরা বাজার, নীলক্ষেত আর ধানমন্ডির স্টার কাবাবে সিরিয়াল ধইরা ভোট বেচতে যায়। কারা বেচতে যায় জানেন? বঙ্গদেশের সবচেয়ে বড় ম্যাধাবী মানুষজন বইলা আপনারা যাদেরকে মনে করেন, সেই মেধাবীরা রাতভর সিরিয়াল ধইরা ভোট বেচতে যায়। বেচে কীসের বিনিময়ে? এক প্লেট চিকেন বা বিফ চাপ, এক প্লেট কাচ্চি কিংবা হানিফ বিরিয়ানির বিনিময়ে। সঙ্গে মাইরা দেয় এক গ্লাস লাচ্চি, কোক কিংবা বোরহানি। হরদম রমরমা ট্যাকার ছড়াছড়ি চলতেছে ডিকসু (ডাকসু) ইলেকশনে। হায়রে হায় বাংলাদেশ, হায়রে হায় বাঙ্গালী, হায়রে হায় ডিকসু সিলেকশন!’

অনলাইন প্রচারণায় ভিডিও বুস্টিং

নির্বাচনে ভোট আদায় করে নিতে সরাসরি প্রচারণার পাশাপাশি চলছে অনলাইন প্রচারণাও। সেখানে ভিডিও বানিয়ে নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এ প্রচারণায় ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের একাধিক ভিডিও বুস্টিং করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ ও ভিপি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম তাদের প্রচারণার ভিডিও বুস্টিং করেছেন। পাশাপাশি ছাত্রদলের প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য অফিসিয়াল পেজ থেকেও একটি ভিডিও বুস্ট করা হয়েছে।

তবে কৌশলী প্রচারণায় এগিয়ে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির একইসঙ্গে অনলাইন এবং অফলাইনে নিজেদের প্রচারণাকে শক্তিশালী করেছে। তাদের পেছনে একটি পুরো ভিডিও টিম কাজ করছে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছেও পৌঁছাতে চাচ্ছে তারা।

শুরুতে কিছুটা এলোমেলো হলেও অনেকটাই গুছিয়ে উঠেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত প্যানেল। তাদের নারী সদস্যরা হলগুলোতে সক্রিয় রয়েছেন। শেষদিনে নারী হলেই বিশেষ নজর তাদের।

এসব প্যানেলের বাইরে শামীম হোসেন, জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ এবং বিনইয়ামীন মোল্লাসহ একাধিক প্রার্থী সক্রিয়ভাবে ক্যাম্পাসে কাজ করছেন।

ভোট চেয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্থানীয় নেতাদের ফোন

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে নিজেদের গ্রাম থেকে ফোনকলে পছন্দের প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইছেন স্থানীয়রা। এসব অনুরোধে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিএনপির ও স্থানীয় ছাত্রদল নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া স্থানীয় শিক্ষার্থীদের নম্বর সংগ্রহ করে আবিদুল ইসলাম খান এবং তার প্যানেলের পক্ষে ভোট চাইছেন।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘অযাচিতভাবে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাছে ভোট চাওয়ায় ছাত্রদলের খুলনা জেলার অধীনস্থ পূর্ব রূপসা থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আলী সুজনকে সব সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে দলটি। একই কাজে জড়িত রয়েছে ছাত্রশিবির এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। স্থানীয় নেতারা ফোনকলে সাদিক কায়েম ও তার প্যানেলকে জন্য ভোট দিতে অনুরোধ করছেন।

এছাড়াও ছাত্রশিবির পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীদের সংরক্ষিত যোগাযোগ নম্বর ব্যবহার করে ভোট চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ছাত্রদলের স্পষ্ট অবস্থান পাওয়া গেলেও ছাত্রশিবির থেকে কোনও স্পষ্ট অবস্থান জানা যায়নি।