‘দেশে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ফিরতে দেওয়া হবে না’
 
                                বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, আগস্টে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াই ছিল- ভারতীয় আধিপত্যবাদ উৎখাতের লড়াই। যারা এখনো বাংলাদেশকে সেই ভারতীয় পচা মাল ধর্ম নিরপেক্ষতার আলোকে পরিচালনা করার দিবাস্বপ্ন দেখছেন তাদের প্রতি অনুরোধ হবে, ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতি পিরিত থাকলে সীমান্ত খোলা আছে চলে যেতে পারেন। শাহজালালের বাংলাদেশ আর কোনোদিন ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ফিরে আসতে দেওয়া হবে না।
রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের মাসুমপুর খেলার মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মামুনুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল, জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই, শোষণ এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বার লড়াই। কিন্তু একদলীয় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান ৭ কোটি মানুষের ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। তিনি ভারত থেকে আমদানি করলেন ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরে আজ প্রথম ব্যাপক সংস্কারের হাওয়া বইছে। সংবিধান সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করে প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়ায় দেশের আলেম সমাজ সহযোগিতার হাত প্রসার করে দিয়েছে। এই সংবিধান সংস্কারের নামে মসুলমানদের একত্ববাদী বাংলাদেশে সংবিধানে বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার পাঁয়তারা করছেন। এ দেশের মানুষ বহুত্ববাদ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। বহুত্ববাদকে বর্জন করে সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে পুনর্বহাল করতে থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে মামুনুল হক বলেন, সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদ বাতিল করে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযুক্ত করে মহান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এখন আমরা দেখছি বিএনপির মধ্যে বাঁশের চেয়ে বেশি বড় বড় কঞ্চি তৈরি হয়েছে। আপনাদের যদি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি, আওয়ামী রাজনীতির প্রতি এত পিরিত থাকে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দেন। বিএনপি যদি এই ধারা থেকে নিজের দলকে রক্ষা করতে না পারে বিএনপির ব্যাপারেও তৌহিদি জনতা ভিন্ন কোনো চিন্তা করতে বাধ্য হবে।
আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ৫টি গণহত্যা পরিচালনা করেছে। প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশের নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না। আগে আওয়ামী লীগের বিচার করেন, ৫টি গণহত্যাসহ হাজার হাজার খুন ও গুমের দায়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনাসহ তার খুনি মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বন্ধ রাখতে হবে।
তিনি সব রাজনৈতিক দলকে ফ্যাসিবাদের মোকাবিলায় অভিন্ন মত এবং জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি ও জামায়াতকে বলতে চাই, আপনাদের দলীয় রাজনীতির স্বার্থে যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরাবার চেষ্টা করেন, দল-মত নির্বিশেষে আপনাদের বিরুদ্ধে গণঐক্য গড়ে তুলব।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, আপনারা ভালো কাজ করেন এ দেশের মানুষ আপনাদের সাহায্য করবে। ইসলামের বিরুদ্ধে ও কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে নিজেরা আত্মহত্যার পথে হাঁটবেন না। আপনাদের নারী বিষয়ক কমিশনের উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশের আলেম সমাজ স্তম্ভিত। ফ্যাসিবাদের আমলে চরম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারও কোনো দিন এত ভয়ংকর প্রস্তাবনা জাতির সামনে উপস্থান করার দুঃসাহস দেখায়নি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি আহমাদুল্লাহ সিরাজীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব মওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরাফত হুসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মওলানা এনামুল হক মুসা ও মওলানা আবুল হাসানাত জালালী এবং কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল সম্পাদক মওলানা ফজলুর রহমান।

 
                 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    