জাতীয় ঐকমত্যের সরকার নিয়ে চিন্তা
সমমনাদের আসন ছাড়ের বার্তা বিএনপি’র

সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গী, যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোট শরিকদের নিয়ে ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। আন্দোলন সঙ্গীদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেয়ারও বার্তা দেয়া হয়েছে। ওদিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে মিত্রদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বিএনপি। শরিকদের পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বাম দলসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে তাদের সঙ্গেও বৈঠক করছে দলটি। এ পর্যন্ত শেষ হওয়া বৈঠকগুলোতে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলো। এর বাইরে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে সিপিবি ও বাসদ। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে চা চক্রে এই দুই দলের নেতারা এমন মত দেন।
আজ বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিএনপি’র সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপি ও সমমনাদের দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আন্দোলনের সঙ্গীদের আসনও ছাড় দেয়ার পাশাপাশি তারা চাইলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। যুগপৎ আন্দোলনের বেশির ভাগ দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। এই নির্বাচনে জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যুগপৎসহ অন্যান্য সঙ্গী, আমরা যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা একসঙ্গে পথ চলবো। আর ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠন করা তো আমাদের প্রতিশ্রুতি। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন এবং সরকার গঠন করারও আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে।
ওদিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে বিএনপি ও সমমনারা। নির্বাচন আয়োজনে আগামী দুই থেকে একমাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে সমমনারা। তারা মনে করেন, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই করা সম্ভব। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে সেগুলোও এরই মধ্যে শেষ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপি ও সমমনা নেতাদের বক্তব্যে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে, তারা বাকি সংস্কার বাস্তবায়ন করবেন। তবে এই সংস্কারকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পেছানোর কোনো অজুহাত মানবেন না তারা।
দলীয় সূত্র জানান, বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় বেঁধে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ইস্যুতে যার যার অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যুগপৎভাবেও কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি’র। নির্বাচনের ইস্যুতে জনমত গঠনে সভা, সমাবেশ এবং গণসংযোগসহ জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। তবে কর্মসূচি বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সমমনাদের সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ওদিকে গত রোববার রাজধানীর বনানীতে হোটেল সেরিনায় সিপিবি ও বাসদের নেতাদের সঙ্গে চা-চক্রে বসেন বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই চা-চক্রটি ছিল অনানুষ্ঠানিক। আজ (বুধবার) বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে বিএনপি’র সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ডিসেম্বরে নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে আমাদের শরিকদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ডিসেম্বরের বেশি অপেক্ষা করার কারণ আমরা দেখি না।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে, সে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঢাকায় একটি জাতীয় কনভেনশন ডাকার জন্য বিএনপিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবির সঙ্গে আমরা বিএনপি’র সঙ্গে একমত পোষণ করেছি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, দেশের সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সনদে সই করে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।