‘মানুষ লাঞ্ছিত করে মজা পান’ সাংবাদিক পেটানো আরডিসি নাজিম

কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে আটক ও পরে বিবস্ত্র করে নির্যাতনকারী সেই নাজিম উদ্দিনকে কক্সবাজারে এসিল্যাল্ড থাকাকালে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছিল।
নাজিম উদ্দিন এক বছর আগে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্বে ছিলেন। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সাংবাদিকদের সঙ্গে অপব্যবহার ও এক বৃদ্ধকে নির্যাতনের অভিযোগে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, সাংবাদিক নির্যাতনকারী নাজিম উদ্দিন গত ২০১৭ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কারণে-অকারণে সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করে তিনি মজা পেতেন। তিনি নিজেকে বড় অফিসার মনে করতেন। সাংবাদিকদের পাত্তাই দিতেন না।
জানা যায়, নানা অনিয়ম, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও স্থানীয় এক বৃদ্ধকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তাকে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর রাঙামাটি জেলার লংগদুতে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফছার বদলির কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে ঢাকায় ছুটিতে থাকার কারণে নাজিম উদ্দিনকে কেন এবং কি কারণে বদলি করা হয়েছে সেটি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নাজিম উদ্দিনের নানা দুর্নীতির ফিরিস্তি। ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, নাজিম উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী (ভূমি) হিসাবে যোগদান করার পর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। নানা অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে রাঙামাটির লংগদুর মতো উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। এটি এক প্রকার শাস্তিমূলক বদলি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলেও তার বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝিকে (৬২) কানে ধরে টেনে হিঁচড়ে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে শুধু কক্সবাজার জেলা প্রশাসন নয়, চট্টগ্রামসহ পুরো দেশে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করেন। বর্তমানে নাজিম উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা, এলএ শাখা, ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখা এবং আরএম শাখা) কর্মরত রয়েছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের পরিবেশ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক রাশেদুল মজিদ জানান, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন অসম্ভব একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে আমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। সে সময়ে আমি হাজির হলেও দুর্নীতিবাজ নাজিম উদ্দিন হাজির হয়নি। আমার লিখিত আবেদনের পর তাকে শাস্তিমূলকভাবে রাঙামাটি লংগদু বদলি করা হয়। পরে এক বয়স্ক বৃদ্ধকে কানে ধরে টেনে হিঁচড়ে আনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেটির প্রতি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন আমাকে বলেছেন তিনি ‘বিব্রত’।
রাশেদুল মজিদ আরও বলেন, সাবেক এই এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিন দায়িত্বপালন করার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নানাভাবে অপকর্ম করে গেছেন। খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়ার আশ্বাসে ঘুষ দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। সাধারণ মানুষদের নানাভাবে নাজেহাল করতেন।