সামনে নির্বাচন, তাই দুই সিটিতে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব : কাদের

নির্বাচন কমিশন যখনই চাইবে তখনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই বলেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে ক্লিন ইমেজের নেতা দেওয়া হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। গুঞ্জন উঠেছে সরকার ঢাকা সিটি নির্বাচন চায় না, আওয়ামী লীগ কী ভাবছেÑ প্রশ্নে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সিটি নির্বাচন হবে জেনেই আমরা সম্মেলনের (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) কাজ সেরেছি। সিটি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা, স্মার্টার করা, নির্বাচনে বিজয়ের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান আমরা সিটিতে গড়ে তুলতে এই কনফারেন্সের আয়োজন করেছি। আমরা দুই সিটিতে ক্লিন ইমেজ উপহার দিয়েছি। কারণ আমরা নির্বাচন করতে চাই এবং বিজয় চাই; সেজন্য আমরা ক্লিন ইমেজের লিডারশিপ এনেছি। নির্বাচন সামনে তাই আমরা মনে করেছি এখানে কনফারেন্স (কাউন্সিল) করে নিউ লিডারশিপ আনা দরকার। এবার প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ দেখার সম্ভাবনা রয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটা আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। আমাদের মনোনয়ন বোর্ড বসবে, যখনই তফসিল ঘোষণা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ডেই সিদ্ধান্ত নেব। এখন আমরা খুঁজছি, চিন্তা-ভাবনা করছি।
আওয়ামী লীগ যথাসময়ে সিটি নির্বাচন চায় কি নাÑ এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন যখনই চায়, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কোনো প্রস্তাব আছে কি না? আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। তারা যখনই চাইবে আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত।
আওয়ামী লীগেও কী এবার নতুন মুখ আসবেÑ প্রশ্নে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নতুন মুখ তো আসবে। আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে কমিটি। আপনি (সাধারণ সম্পাদক) থাকবেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমি বারবার এক কথাই বলেছি, এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আমাদের সভাপতি যেটা ভালো মনে করবেন, কাউন্সিলরদের মাইন্ড সেট তিনি ভালো করেই জানেন। আমাদের কাউন্সিলররাও সবসময় নেত্রীর ওপর আস্থা রাখেন। তার সিদ্ধান্তে আমাদের দ্বিমত নেই। দলের স্বার্থে তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তাকে স্বাগত জানাব। আমি নিজেও স্বাগত জানাব। শুদ্ধি অভিযান নিয়ে এক প্রশ্নে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে, সময়মতো দেখবেন। শুদ্ধি অভিযান স্থিমিতও হয়নি, কোনো শৈথিল্যও হয়নি।
এর আগে ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, আমাদের কিছু প্রকল্প আছে সেগুলোর কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। কুমিল্লার ময়নামতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলÑ এগুলো বড় প্রকল্প। এছাড়াও ফেনী নদীর ওপর একটি সেতুও শেষ পর্যায়ে। খাগড়াছড়িতে আরও কিছু প্রকল্প আছে, এগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে।
কাদের বলেন, এনআরসি নিয়ে তারা বারবার বলে আসছে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি, ঘটবে না। ভারত সরকার স্বয়ং প্রাইম মিনিস্টার আশ^স্ত করেছেন, সুতরাং এ নিয়ে আমরা আর প্রশ্ন করে বিব্রত করতে চাই না। আমাদের বাইল্যাটারাল রিলেশনশিপটা ভালো, চমৎকার পর্যায়ে আছে। কাজেই যেকোনো সমস্যা হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনেক উচ্চতায়, এ সময়ে আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের টানাপড়েন নেই। যে কারণে কোনো কিছু বৈরিতার সৃষ্টি করে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তার পদত্যাগের দাবি নিয়ে যা বলেছেন, তাকে ‘কথার কথা’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সেটা তো কথার কথা। সেটা তো আর পদত্যাগ করার বিষয় নয়। হয়তো কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, যেহেতু পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কাজেই কেউ কেউ তো মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করে। সেজন্য বলছেন যে পদত্যাগ করলেই যদি সমাধান হয়ে যেত তাহলে তো ‘আমি এক সেকেন্ডেই পদত্যাগ করতাম।’ হাসতে হাসতে কাদের বলেন, ‘সেটা উনি অযৌক্তিক কিছু বলেননি, এটা কথায় কথায় বলতেই পারেন।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা আছে, তারা কারসাজিও করে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং কারসাজিটা যাতে বন্ধ হয় সে ব্যাপারে সরকারও কঠোর অবস্থানে আছে। পেঁয়াজের এই সঙ্কট বেশি দিন থাকবে না মন্তব্য করে কাদের বলেন, মাঝেমধ্যে এমন অবস্থা হয়, কতগুলো কারণ আছে। কিছু গুজব ছড়িয়ে সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়, আমাদের দেশে এটি চলে। তাছাড়া এখানে মাঝেমধ্যে কথায় কথায় পরিবহন ধর্মঘট, এসব কারণেও সাপ্লাই লাইন দুর্বল হয়ে যায়।