সোহেল তাজের সাথে নির্যাতিত সেই ছাত্রলীগ নেতা যুবলীগে আলোচনায়

ক্যাসিনোকাণ্ডে লণ্ডভণ্ড আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব যাচ্ছে কাদের হাতে, সেটিই এখন নেতাকর্মীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
তারুণ্যনির্ভর, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব চাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। ফলে এই সংগঠনের শীর্ষ পদসহ আগামী কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরা।
পাশাপাশি অন্য দল থেকে এসে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে যারা বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন- এমন বিতর্কিত নেতাদেরও জায়গা হবে না নতুন কমিটিতে। তাদের পরিবর্তে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিএনপি জামাত আমলে দলের প্রতি ত্যাগ - নির্যাতিত -সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বিশেষ করে ঢাকা মহানগর যুবলীগের শীর্ষ পদে এমন নেতাকেও দেখা যেতে পারে, যিনি এর আগে কখনো যুবলীগের সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
এদিকে ,ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের সাথে ওয়ান-ইলেভেনের সময় নির্যাতিত এবং ক্যাসিনো খালেদ ওরফে ল্যাংড়া খালেদের নির্যাতনে দীর্ঘদিন দেশান্তরী সাবেক ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ার।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় সোহেল তাজের সাথে পুলিশি নির্যাতনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধরে ভাইরাল হয়ে আসছে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ারের।
যেভাবে দেশান্তরী ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার,
দৈনিক আমাদের দিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওসার। খিলগাঁওয়ের আমতলা মসজিদ থেকে বের হতেই কাওসারকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন খালেদ মাহমুদ। কিন্তু পরে প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে মামলার সাক্ষী করে তার জায়গায় হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল শাহরিয়ারকে আসামি বানিয়ে দেন তিনি।
এদিকে, খালেদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফরে গেলে মিনিট দশেক কথা বলার সুযোগ পান সোহেল। খালেদের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেত্রীকে খুলে বলেন তিনি। তখন খালেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় , কমলাপুর, খিলগাঁও থেকে শুরু করে বৃহত্তর একটি এলাকাজুড়ে বড় ভূমিকা রাখেন ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ার। তাকে ঘিরে ছাত্রলীগের একটি প্রজন্ম তৈরি হচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সোহেলকে বড় বাধা মনে করতে থাকেন খালেদ। তাই তিনি মামলায় ফাঁসানোর পাশাপাশি সোহেলের নিজের এবং শ্বশুরের বাসায় নিয়মিত হামলা-ভাংচুর চালাতেন। একপর্যায়ে তার নির্যাতনের কাছে হার মেনে দেশত্যাগ করেন সোহেল। তিনি কানাডা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।বর্তমান তিনি ঢাকায় আছেন।
সোহেল বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছিলাম। নতুন প্রজন্মকে আদর্শবান করে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু খালেদের নির্যাতনের কারণে এ কাজ বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারিনি। উল্টো দেশের মায়াই ত্যাগ করতে হয়েছে।'
নির্মম খুনের শিকার কাওসারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ খাজা মহসিন বলেন, 'এলাকার সবাই জানে, কাওসার হত্যায় খালেদ সরাসরি জড়িত। মামলায় তাকে আসামিও করা হয়েছিল। বিস্ময়করভাবে তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেলকে আসামি বানিয়ে নিজেকে মামলার সাক্ষী করে মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেন।'
খালেদের নির্যাতনে দেশান্তরী ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ার জানান, ২০১১ সালে দেশত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফরে গেলে খালেদের বিরুদ্ধে মিনিট দশেক কথা বলার সুযোগ পান সোহেল। খালেদের ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেত্রীকে খুলে বলেন তিনি। তখন খালেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, ক্ষুব্ধ মহসিন বলেন, তার দাদা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ সহচর। ১৯৫৪ সালে যখন বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্টের সংস্কৃতিমন্ত্রী, তখন তার দাদা এ কে রফিকুল হোসেইন ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। এমন ঐতিহ্যবাহী পরিবারের উত্তরাধিকার হয়েও তাদের আত্মগোপনে থাকতে হয় এই খালেদের কারণে। এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে! খালেদের কারণে দলে কাঙ্ক্ষিত পদও পাননি বলে জানান তিনি।
২০০৬ সালে এজাজ হত্যার সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল খালেদের। শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল, রনি, শিবলুসহ রইস বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত ছিল এতে।