ঢাকা সোমবার, ১০ই নভেম্বর ২০২৫, ২৭শে কার্তিক ১৪৩২


পিরোজপুর ২ আসনে দলীয় গ্রুপিংএ বিভাজন চরমে


প্রকাশিত:
১০ নভেম্বর ২০২৫ ১১:৩৬

৭ ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় বিএনপি ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করেছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কর্ম সূচীর বিভিন্ন চিত্র ও অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উপজেলা বিএনপির গ্রুপিং এখনো বিদ্যমান। সাথে যুক্ত হয়েছে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনকে এড়িয়ে চলার প্রবনতা।

গত শুক্রবার ৭ ই নভেম্বরের কর্মসূচী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সুমন মঞ্জুরকে সাথে নিয়ে স্বরুপকঠী পৌর বিএনপি র‍্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির কোনো গ্রুপেরই নেতৃবৃন্দ ও কর্মী সমর্থকরা অংশ গ্রহন করেননি। আলোচনা সভার বক্তৃতায় পৌর বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম ফরিদকে বলতে শোনা গেছে, উপজেলা নেতৃবৃন্দের এ সভায় উপস্থিত থাকা উচিৎ ছিল। এ বক্তৃতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উপজেলা নেতা কর্মী ও সমর্থকরা তাদের অনুষ্ঠান সু কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুমন মঞ্জুর স্বরুপকাঠী পৌর বিএনপির কব্জায় রয়েছেন। তিনি অন্যান্য উপজেলা নেতৃবৃন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে উপজেলা নেতৃবৃন্দের কর্মী সমর্থকরাও সুমন মঞ্জুর দিকে ধাবিত হচ্ছে না। বিএনপির আরেক নেতা বলেছেন, সুমন মঞ্জুর হয়তো মনে করছেন, তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন তাই বিএনপির সবাইকে ধানের শীষের পতাকাতলে আসতে হবে। কিন্তু নেছারাবাদ উপজেলার ক্ষেত্রে বিষয়টি সে রকম না-ও হতে পারে।

পিরোজপুর ০২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব, আব্দুল্লাহ আল বেরুনী সৈকত তাঁর অনুসারী কর্মী সমর্থকদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক বর্নাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন। তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা সকলেই ধানের শীষের লোক এবং ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করব। কিন্তু তার অনুসারীরা তা মানতে রাজী নয়। তাদের ভাষ্য, এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য আব্দুল্লাহ আল বেরুনী সৈকত। মনোনয়ন চুড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।

পিরোজপুর ০২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক নেতা নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, মোঃ ফখরুল আলম তার অনুসারীদের নিয়ে ০৭ ই নভেম্বর সকালে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে র‍্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আমরা পিরোজপুর ০২ আসন থেকে ফখরুল আলমকেই ধানের শীষের কান্ডারী হিসাবে দেখতে চাই। বিকল্প কিছু চিন্তা করিনা।

এদিকে বুধবার নেছারাবাদ উপজেলা থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ফখরুল আলমের মনোনয়ন ঘোষণার দাবীতে উপজেলা সদরে শত শত নারী পুরুষ মিছিল শেষে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে।

ভান্ডারিয়ার আরেক নেতা, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ভান্ডারিয়া সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি, মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বেও নেছারাবাদ কাউখালি ভান্ডারিয়ায় পৃথক পৃথক র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারো নেতাকর্মীর সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগানে এবং মাহমুদ হোসেনকে পিরোজপুর ২ আসন থেকে চুড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করার জোর দাবি জানান।

তবে একটি বিষয় প্রতীয়মান, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের নামে এই এলাকার বিএনপি মনা সকল গ্রুপই নিজ নিজ নেতার প্রচারনা, জনসমর্থন ও মনোনয়নের দাবি উত্থাপন করছে।

সবকিছু বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নেছারাবাদ উপজেলা থেকে ধানের শীষের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় উপজেলার জনসাধারণ বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। এ ছাড়াও সুমন মঞ্জুর অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে স্বরুপকাঠী পৌর বিএনপির কয়েকজন নেতাকে গুরুত্ব দেয়ায় বিভাজনের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। যা আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে রাজনীতি সচেতন মহল মনে করছেন।

অন্যদিকে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ এর স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় রাজপথে চাঙ্গা হতে পারছেনা তার অনুসারীরা। এতে নেছারাবাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক প্রকারের টানাপোড়েন চলমান। তার অনুসারীদের দাবি, নির্বাচনের খাতিরে দলের স্বার্থে খুব দ্রুত ত্যাগী জননেতা ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে এলাকার রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হবেনা এবং পিরোজপুর ২ আসনে ধানের শীষের ভরাডুবির আশংকাও থেকে যায়।

এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিরোজপুর ২ আসনে চলমান বিভক্তি বা বিভিন্ন গ্রুপিং এর কারনে যে বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে এলাকার সকল বিএনপি মনা গ্রুপকে একই ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। তা না হলে এই এলাকায় ধানের শীষের বিজয় অনিশ্চিত। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে এর সঠিক সুরাহা খুজে বের করা অতিব জরুরী।