ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের গুজব: সরেজমিনে সত্যতা মেলেনি


প্রকাশিত:
১১ আগস্ট ২০২৫ ২২:৫৯

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শ্যামনগর উপজেলার নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা হয়। তবে সরেজমিন পরিদর্শনে ভিডিওতে প্রদর্শিত হাসপাতালের অবকাঠামো এবং শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোর মধ্যে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে, হাসপাতাল চত্বরে ভাঙচুর বা হামলার কোনো চিহ্নও দেখা যায়নি।

ঘটনার সূত্রপাত ৯ আগস্ট, শনিবার রাতে। ওইদিন একটি অজ্ঞাত হাসপাতালের ভাঙচুরের দৃশ্য ধারণ করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, শ্যামনগর উপজেলা জামায়াত ও শিবিরের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে।

পরবর্তীতে বিষয়টি যাচাই করতে সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাসপাতালের মেইন গেট, আসবাবপত্র, চেয়ার-টেবিল কিংবা ভেতরের কোন কক্ষে কোনো ধরনের ভাঙচুরের চিহ্ন নেই। বরং হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খলভাবে চলছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, “আমাদের হাসপাতালে এমন কোনো ঘটনার খবর নেই। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি কোথাকার, সেটাও আমি জানি না। এখানে কোনো ভাঙচুর বা মারামারির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।”

রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তরিকুল ইসলাম জানান, “আমি নিজেও ফেসবুকে ভিডিওটি দেখেছি। ভিডিওটির সঙ্গে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনো মিল নেই। গত কয়েক বছরেও এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ গুজব ছড়িয়েছে।”

স্যাকমো মোঃ শাকির হোসেন বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। ভিডিওটি শ্যামনগরের হাসপাতালের নয়। এটি ব্যবহার করে একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে জামায়াত-শিবিরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে ও গুজব ছড়াচ্ছে।”

শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবদুর রহমান বলেন, “ভিডিওটি কোথাকার, সেটিও নিশ্চিত নয়। অথচ আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরাসরি দোষারোপ করা হচ্ছে। এটি আমাদের সাংগঠনিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

এ ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচার বলে মনে করছেন, যার মাধ্যমে একটি সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সচেতন মহল বলছেন, এ ধরনের গুজবের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে, অন্যথায় জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।