ঢাকা রবিবার, ১০ই আগস্ট ২০২৫, ২৭শে শ্রাবণ ১৪৩২


“জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন” শীর্ষক সেমিনার


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২৫ ০০:৪৪

০৮ আগস্ট শুক্রবার ২০২৫ খ্রি: বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন কর্তৃক "জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন" শীর্ষক একটি সেমিনার এসোসিয়েশনের প্রধান কার্যালয়ে, বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব জনাব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। মুখ্য আলোচক হিসেবে প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান, পিএইচডি, ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয় সচিব ড. মোঃ সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া।

সম্মানিত আলোচকদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. সৈয়দা লাসনা কবীর, অফিসার্স ক্লাব ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব জনাব এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব জনাব কানিজ মওলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. শাফিউল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। এসময় শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা জনাব সানজিদা খান দ্বীপ্তি, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন জনাব সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ আবু সাঈদের ভাই জনাব মোঃ রমজান আলী ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বক্তব্য দেন। তারা আগামী দিনের জনপ্রশাসনের কাছে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহীদ ও আহত পরিবার এবং দেশবাসীর প্রত্যাশা তুলে ধরেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সকল ব্যাচের কর্মকর্তাদের সরব ও প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল।

সেমিনারে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব জনাব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, কোনো একটি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পৃথিবীতে এত মানুষ আর কোথাও মারা যাননি। ২০১৮ সালের আন্দোলন বৃথা যায়নি। তখন শিশু কিশোরেরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখয়েছিলো রাষ্ট্রপরিচালনাকারীরা ব্যর্থ। তাদের সেই বার্তা কেউ গ্রহণ করেনি। ২০২৪ সালে তারা তা বাস্তবায়ন করেছে। সিভিল সার্ভিসের সামনে দুটি পথ রয়েছে। এর যে কোন একটি পথ বেছে নিতে হবে। সিভিল সার্ভিসকে পুরনো পথে নেয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের আমলে একটি মহাসুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সময় প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর দলীয়করণ নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোনো চাপ নেই। সরকার কর্মকতাদের আইন কানুনের ভিতরে থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান, পিএইচডি বলেন গত সরকারের আমলে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। অভ্যূত্থানের ফলে বঞ্চিত অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। এখন রাজনীতি থেকে প্রশাসনকে দূরে রাখতে হবে। প্রশাসনে যোগ্য মানুষ থাকবেন। পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করবেন। তবে দলীয় নীতি বাস্তবায়ন করার কারণে সমস্যাটা হয়েছে। আমাদের গণঅভ্যূত্থানের চেতনা ধারণ করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাথে জনগণ ও শহীদ পরিবারকেও যুক্ত করার দরকার। সিভিল সার্ভিসের যেমন বহু পুরানো ইতিহাস রয়েছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সভ্যতার সুতিকাগার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েল সাথে প্রশাসনের মেলবন্ধন শক্ত করতে হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান বলেন, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারের কাজগুলো প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করছেন। আমরা পিছনে তাকাবোনা। সামনে এগ্রিয়ে যেতে হবে। আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে সাহস ও সততা বজায় রাখতে হবে। কর্মকর্তাদের কেউ দুর্নীতি করলে এ দায় কেউ নেবে না। পাঠ্য বইতে শহীদ আনাসের চিঠি যুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকার গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব জনাব কানিজ মওলা বলেন, আমরা কাজ করার জন্য আগ্রহী। আমাদেরকে কাজে লাগান। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আজ্ঞাবাহী হওয়ার জন্য জনগণের টাকায় আমাদের বেতন দেয়া হয়না। জনগণের সেবার জন্যই বেতন দেয়া হয়। আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট না হতে পারে সে জন্য আমরা কাজ করবো।

অফিসার্স ক্লাব ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব জনাব এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার বলেন, দলবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে প্রশাসন ক্যাডারের অস্তিত্ব বিলীন হবে। আগমী নির্বাচনে কেউ যাতে আমলাদের ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দা লাসনা কবীর বলেন, বিগত আমলে রাজনীতির সাথে প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়েছিল। দুর্নীতির জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবকের স্থলে জনগণের প্রভু হয়ে গিয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যূত্থান শুধু কোটার জন্য হয়নি; জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনকে সেবামূলক, মানসম্মত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে প্রশাসনের ভবিষ্যত কর্মকান্ড পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মোঃ সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া জনপ্রশাসনের বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জনাব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ, মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশগড়ার প্রত্যয়ে জুলাই গণঅভ্যূত্থান হয়েছিলো। আমাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট দেশে সরকার ছিলনা। সে সময়ে প্রশাসনের সদস্যরা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন।

সেমিনারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ জুলাই গণঅ্যভুত্থানের চেতনা ও দর্শনকে ধারণ করে আগামী দিনে দলীয় চিন্তা ও মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব ও কতব্য পালনে ব্রতি হবে মর্মে সেমিনারে জোরালো প্রত্যয় ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।