প্রধান প্রসিকিউটর জানালেন
চলতি বছরেই শেষ হবে জুলাই গণহত্যা মামলার বিচার

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আলোচিত জুলাই গণহত্যাসহ বেশ কয়েকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে।’
গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ বছরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলার বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব। সেই গতিতেই বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।’
তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের বিপ্লবী ও ভুক্তভোগী পরিবারদের আমরা আশ্বস্ত করতে চাই যে, বিচারের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই কুশীলবদের দণ্ড নিশ্চিত হবে।’
লাশ পোড়ানোর মামলা : ৮ আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ : এ দিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত ছয় তরুণের লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় দায়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল এই আদেশ দেয়। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আব্দুল্লাহিল কাফী, শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল হোসেন ও কনস্টেবল মুকুল।
গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় বিক্ষোভরত তরুণদের ওপর গুলিবর্ষণ করে হত্যা করা হয় এবং পরে তাদের লাশ একটি পুলিশ ভ্যানে করে নির্জন স্থানে নিয়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এদের মধ্যে একজন তখনো জীবিত ছিলেন। তাকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
মামলার অভিযোগে ৩১৩ পৃষ্ঠা নথিপত্র, ৬২ জন সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দু’টি পেনড্রাইভ জমা দিয়েছে প্রসিকিউশন। মামলায় মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে পাঁচ হত্যা : তিন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারের নির্দেশ : একই দিনে লক্ষ্মীপুরে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা আরেকটি মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিকে আগামী ২৮ জুলাই ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন জাবেদ এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম।
গত বছরের ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গুলিতে চার শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- আল আসাদ আফনান, সাব্বির হোসেন রাসেল, কাউসার হোসেন, ওসমান গণি ও মো: সুজন।
এই মামলারও তদন্ত ও অভিযোগপত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে প্রসিকিউশন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি পরিচালনা করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এবং প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
আগস্টে শুরু হচ্ছে সাক্ষ্য গ্রহণ : ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে আগামী ৪ আগস্ট। অপর দিকে চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ হবে ১১ আগস্ট।
এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে আগামী মাসেই।