বিএইচআরসি’র ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করাসহ ৯ দফা সুপারিশ

মানবাধিকার সুরক্ষায় বিদ্যমান আইন সংশোধনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল, যেকোনো মামলার বিচারকার্য ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান সংশোধনসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন- বিএইচআরসি।
এ কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সুপারিশ মানবাধিকারকর্মীসহ দেশের ১৭ কোটি মানুষের দাবি। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার এই সুপারিশ কার্যকর না করলে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি পালন করা হবে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ও সুপারিশ তুলে ধরেন কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. সাইফুল ইসলাম দিলদার। কমিশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার কাজী রেজাউল মোস্তফার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু মাসুম ফয়সাল, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন, মুক্ত রহমান, মোহাম্মদ আল এমরান, সিরাজুল ইসলাম বিপ্লব, বকুল চন্দ্র রায় প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৯ দফা সুপারিশে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিগত দিনে নিহত, নিখোঁজ (গুম) এবং আহত ক্ষতিগ্রস্ত মানবাধিকারকর্মীদের নামের তালিকা তৈরি ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সুপারিশে আরো বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইন প্রণয়ন করে সাধারণ মানুষ যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে এমন কমিশন গঠন করতে হবে।
দেশের প্রকৃত ও সিনিয়র মানবাধিকারকর্মীদের কমিশনের সর্বস্তরের কমিটিগুলোতে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিগত স্বৈরাচার সরকার এবং কামাল উদ্দিন বাহিনীর হাতে নির্যাতিত মানবাধিকারকর্মীদের উপযুক্ত ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
এ সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব আরও উল্লেখ করেন এনএইচআরসি’র সাথে বাংলাদেশ মানবাধিকার বিএইচআরসি’র নামের সাথে,কাজের সাথে এবং লোগোর সাথে কোন ধরণের মিল নেই। বিএইচআরসি দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে প্রতি মাসে মাসিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পুলিশি নির্যাতন বন্ধ এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন-বিএইচআরসি প্রচারের কারণে স্বৈরাচার হাসিনার দালাল ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বিএইচআরসি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেই ষড়যন্ত্রের কারণে মহাসচিব হিসেবে এক বছরের অধিক সময় কারা ভোগ করতে হয়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ও কতিপয় দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন বিএইচআরসি’র বহু সংখ্যক মানবাধিকারকর্মী দেশজুড়ে বিগত সরকারের আমলে নির্যাতনের স্বীকার হয়। এ গণ নির্যাতনে হাজার হাজার কর্মী গৃহহারা, গুম এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, ৫ ই আগস্ট ২০২৪ ইং ছাত্র জনতা ও মানবাধিকারকর্মীদের গণআন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার মানবাধিকারকর্মী বান্ধব ও মানবতার পক্ষে সোচ্চারিত সকলের গ্রহণযোগ্য। এ অন্তবর্তী সরকারের মধ্যে চারজন উপদেষ্টা মানবতাবাদী সংক্রিয় সংগঠক। তারা আমাদের সংগঠনের এক সময়কার কর্মী। তাদের সংগঠন দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে আর আমাদের সংগঠন দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত মানবাধিকার ও দেশের শোষিত, নিপীড়িত মানুষদের সহায়তায় একই সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সরাসরি হস্তক্ষেপে ও চাপ দিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের তিনটি রেজিস্ট্রেশন স্থগিত রয়েছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। স্থগিত নিবন্ধনগুলো পুনরায় চালুর লক্ষ্যে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করতে হবে।
স্বৈরাচার সরকারের দোসর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারি এবং বিগত সরকারের ফরমায়েশি বিচারপতি ও বিচারকদের তালিকা তৈরি করে অবিলম্বে তাদের অপসারণ করতে হবে।
এ সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, মানবাধিকারকর্মীদের নির্যাতনের প্রধান নির্দেশদাতা স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইনসচিব গোলাম সারওয়ার, ডিবি পুলিশ প্রধান হারুন-উর-রশীদ, পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার, ইন্সপেক্টর মাসুদ রানা, তেজগাঁও থানার ওসি ইন্সপেক্টর অপূর্ব হাসান এবং সর্বোপরি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ এবং তার পরিষদ ও অফিসে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানবাধিকার কর্মীদের নির্যাতনে সরাসরি দায়ী। অন্তবর্তী সরকারের কাছে তাদের বিচার ও শাস্তির দাবী করছি।