ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় নেতা সবাই চান এমপি হতে


৯ জুন ২০২১ ১৬:৪২

আপডেট:
৯ জুন ২০২১ ১৭:১৭

আগামী ১৪ জুলাই জাতীয় সংসদের তিন আসনের উপনির্বাচন। বিএনপি এ উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) এ উপনির্বাচনে অংশ নিলেও এই তিন আসনে দলটির তেমন কোনো শক্তিশালী প্রার্থী নেই। ফলে এই তিন আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তাই মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা সবাই মনোনয়ন পেতে মরিয়া।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন নেতারা। কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনের মনোনয়ন পেতেও চলছে জোর তদবির-লবিং। বিগত সময়ের মতোই এ তিন আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্যদের (এমপি) স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরাও পিছিয়ে নেই।

ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক গত ১৪ এপ্রিল, সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১১ মার্চ এবং কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি আবদুল মতিন খসরু গত ১৪ এপ্রিল মারা যান।

গত শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোয়নয়ন ফরম বিক্রি শুরু হলে তা সংগ্রহের হিড়িক পড়ে যায়। গতকাল পর্যন্ত চার দিনে তিন আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৮৭টি। এর মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনের ২৬টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে এবার রেকর্ড হবে। উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রথম দিনই মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন সিলেট-৩ আসনের এমপি প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী এবং কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি প্রয়াত আবদুল মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিমা সোবহান খসরু।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, এসব নির্বাচনী এলাকার বাইরের অনেক বড় নেতাও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর বড় কারণ হলো, এসব আসনে অন্য রাজনৈতিক দলের শক্তপোক্ত কোনো প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে না। ফলে এমপি হওয়ার জন্য এখানে বড় কাজ হলো ‘টিকিট কনফার্ম’ (দলীয় মনোনয়ন পাওয়া) করা। তারা বলেন, তিন আসনেই ওয়ার্ড নেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতারা প্রার্থী হতে চাইছেন। আছেন ব্যবসায়ীরাও।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–য়া গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আগামীকাল পর্যন্ত ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়া হবে। প্রথম দিন থেকেই অনেক ফরম বিক্রি হচ্ছে।’

জানা গেছে, ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া অনেকেই। এ আসনে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী টার্মিনাল হওয়ায় এ আসনে এমপি হতে মরিয়া অনেক প্রভাবশালী। এ আসনের অন্তর্গত এবং আশপাশের থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও মনোনয়নপ্রত্যাশী। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীরাও বাদ নেই। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হক হ্যাপিও এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। অনেক প্রার্থী এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এলাকায় শোডাউনও করছেন। আরও মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহজাহান দেওয়ান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু, বৃহত্তর মিরপুর থানার সাবেক ছাত্রলীগের সহসভাপতি লুৎফর রহমান, মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রুখসানা, মিনা মালেক, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য মতিউর রহমান, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হানিফ, উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হায়দার আলী খান ও দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা ইতি। মনোনয়ন চান ফুয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আরিফুল হক চৌধুরীও।

একইভাবে সিলেট-৩ আসনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ২৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ডাকসুর সাবেক সদস্য দেওয়ান গৌস সুলতান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, বালাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর, দক্ষিণ সুরমার উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আবদুর রকিব মন্টু ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এনাম উল ইসলামও প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছেন। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর নামও আলোচনায় রয়েছে। মনোনয়ন দৌড়ে আরও আছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ সিলেট জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছিত টুটুল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মনির হোসাইন ও সাবেক ছাত্রনেতা আলহাজ সেলিম আহমদ।

একইভাবে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণায়। প্রয়াত এমপি আবদুল মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু, ছেলে মুনেফ ওয়াসিফ, মেয়ে ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন এবং ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌসও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে। এছাড়া রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেম, সহসভাপতি মো. আল-আমিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, অধ্যক্ষ মো. আলী চৌধুরী মানিক, মেজর জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুস সালাম বেগ, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল মজুমদার, তারিক হায়দার, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আইন সম্পাদক সোহরাব খান চৌধুরী, বিএলএম গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, আবদুল জলিল, আবু জাহের, শাহজালাল মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহতাব, মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এমপি কর্নেল (অব.) ফারুক খান  বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল। মানুষের সেবা করাই এই দলের লক্ষ্য। তাই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যাও বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। তারপরও মনোনয়ন বোর্ড সবচেয়ে ভালো প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন। আগের মতোই নির্বাচনী এলাকায় যিনি জনপ্রিয় এবং যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ নেই, সেরকমই প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এত মনোনয়নপ্রত্যাশী, এটা যেকোনো একটি দলের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ সরকার নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্য তা হারিয়েছে। আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে সে-ই জিতবে। ফলে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মনোনয়ন পেতে অনেকেই মরিয়া হয়ে থাকেন। রাজনীতিবিদ ও নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীই মনোনয়ন পাক, এটা চান দলের নেতাকর্মীরা। আর হুট করে আসা কাউকে দিলে তারা দলের নেতাকর্মীদের এবং নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকেন না।

গত ২ জুন ঢাকা-১৪, সিলেট-৩ ও কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ তিন আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষদিন ১৫ জুন। ১৭ জুন যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৩ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রচার শেষে ভোট হবে ১৪ জুলাই।দেশ রূপান্তর