ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


বিতর্কিত তৃণমূল নেতাদের বাদ দেবে আ.লীগ


৮ মে ২০২১ ১৭:৪২

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ০৯:১০

জেলা-উপজেলায় দলীয় পদ-পদবি পেয়ে বিতর্কিত হয়ে ওঠা নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, কর্র্তৃত্ব নয়, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নেতা বানানো হয়। যারা কর্র্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার রাজনীতি করছেন এবং সংগঠনকে দুর্বল করছেন দল অবশ্যই তাদের ব্যাপারে কঠোর হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন  বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই জেলা-উপজেলা সফর আরও বাড়ানো হবে। যেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয় না দীর্ঘদিন সেসব জেলা-উপজেলার সম্মেলন করা হবে। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার রাজনীতি যারা করবেন তাদের দলের প্রয়োজন নেই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, জেলা-উপজেলা থেকে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা পড়া বেশকিছু অভিযোগ আমলে নিয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলার রাজনীতি গতিশীল করতে চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে নোয়াখালী জেলার একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বৈঠকও করেছেন। এর আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফের গুলশানের বাসায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বৈঠক ধীরগতিতে হলেও ঈদের পরে দ্রুতগতিতে জেলা-উপজেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে আনা হবে। মীমাংসা করার চেষ্টা করা হবে জেলা-উপজেলার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। সমাধান না হলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার পরও দলটির তৃণমূলের রাজনীতি ভীষণ অসংগঠিত। এর পেছনের কারণ অনুসন্ধানে কাজ চলছে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। কোন জেলা-উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব কী-করছেন? ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অন্তরায় কোন জেলা-উপজেলায় কারা সেটাও তুলে আনতে চান কেন্দ্রীয় নেতারা। কর্মীদের সঙ্গে অরাজনৈতিক আচরণ কারা করছেন, তাদের অভাব-অনুযোগ কারা আমলে নেন না সেসব দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে চিহ্নিত করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে উত্থাপন করা হবে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা  বলেন, কেন্দ্রে বিস্তর লিখিত অভিযোগ জমা আছে। এর অধিকাংশই জেলা-উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আধিপত্য, বিরোধ জিইয়ে রাখা ও সাধারণ কর্মীদের গুরুত্ব না দেওয়া, বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে সখ্য রেখে রাজনীতি করার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হেফাজত তা-বকে ঘিরে ওই জেলায় সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে বলে কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

ফলে জেলা-উপজেলার রাজনৈতিক অবস্থার দিকে নজর দিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথম দিকে ২০টি জেলা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করছেন। জেলাগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী অন্যতম। রয়েছে ফেনী, কুড়িগ্রাম, পাবনা, রাজশাহী জেলা-মহানগর, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, নাটোর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, সাতক্ষীরা। এসব জেলার অন্তর্গত উপজেলা, পৌরসভার রাজনীতির দুর্বলতাগুলোও তুলে আনা হবে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য  বলেন, আমাদের সংগঠনের তৃণমূলের বেশকিছু এলাকায় এমন কিছু নেতা রয়েছেন যারা সংগঠনের চেয়ে নিজেদের প্রভাবশালী, ক্ষমতাশালী মনে করেন। দলের চেয়ে নিজের গুরুত্ব বেশি মনে করে স্থানীয় রাজনীতি করেন। সংসদ সদস্যরাও আছে এ মানসিকতার। ফলে রাজনৈতিক কর্মীদের তেমন গুরুত্ব পান না। নিজের ক্ষমতা-প্রভাব নিশ্চিত করতে দলের কর্মীদের চেয়ে ভিন্ন চিন্তা-চেতনার মানুষকে সুযোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। ফলে দলের ভেতরে একধরনের অসন্তোষ কাজ করছে। এমন বেশকিছু তথ্যের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় নেতারা কাজে নেমেছেন। শুরুতে সুনির্দিষ্ট কিছু জেলা-উপজেলা ধরে কাজ করছি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেশকিছু জেলা-উপজেলার নেতাদের নিয়ে সাধারণ কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ওইসব জেলা-উপজেলায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে সেগুলো বের করার জন্য কাজ করছেন। পরে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী সমাধান করা হবে।

ফারুক খান বলেন, বেশকিছু জেলা-উপজেলা বিরোধপূর্ণ রয়েছে। ফলে সংগঠন অসংগঠিত ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। ইতিপূর্বে আপনারা দেখেছেন বিরোধপূর্ণ রাজনীতির কারণে আমরা দুটি জেলা নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জের জেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অব্যাহতি দিয়েছি। সংগঠন শক্তিশালী করতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দৃঢ় সংকল্প। বিরোধ মেটানো সম্ভব না হলে দায়িত্ব থেকে প্রয়োজনে আরও সরিয়ে দেওয়া হবে।