পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ৫ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার

দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা বিরাজ করছে। ক্রমাগত দরপতনের প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুরুর পর একদিনেই ৩ শতাংশ পয়েন্ট হারায় সূচক।
দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা বিরাজ করছে। ক্রমাগত দরপতনের প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুরুর পর একদিনেই ৩ শতাংশ পয়েন্ট হারায় সূচক। এ অবস্থায় দেশের পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বৈঠকে পুঁজিবাজারের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। গত নয় মাসে কী ধরনের সংস্কার করা হয়েছে, কোথায় কোথায় এখনো সংস্কার চলমান সেগুলো নিয়ে উনি বিস্তারিত একটা চিত্র তুলে ধরেন এবং তার আলোকে খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথমত, তিনি বাংলাদেশে যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার আছে, যেমন ইউনিলিভার, তাদের দ্রুত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনার কথা বলেছেন।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যাদের আয় বিলিয়ন ডলার, যেমন সিটি, মেঘনা আরো অনেক কোম্পানি রয়েছে। এ ধরনের বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য বলা হয়েছে। এজন্য কী ধরনের প্রণোদনা দরকার, সেটি বিএসইসির চেয়ারম্যানকে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তৃতীয়ত, পুঁজিবাজারে কায়েমি স্বার্থের অনেক মানুষজন রয়েছেন, তাদের অনেক স্বার্থ আছে এখানে। এর ফলে দেখা যায় আমরা সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও অনেক সময় সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে চায় না বা তারা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এজন্য পুঁজিবাজারে যাতে বিস্তৃত সংস্কার করা যায়, সেজন্য কোনো স্বার্থ নেই এমন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে তিন মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
চতুর্থত, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরনের দুর্নীতির কথা শোনা যায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে, যাতে পুরো পুঁজিবাজারে এক ধরনের বার্তা পৌঁছায়—কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। আর পঞ্চমত, দেশে বড় বড় যেসব কোম্পানি আছে, যারা ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ নেয়। অনেক সময় সিন্ডিকেট ঋণ দেয়, অনেকগুলো ব্যাংক থেকে ১ হাজার, ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় তারা। বৈঠকে এ ঋণকে নিরুৎসাহিত করে এর পরিবর্তে কীভাবে তারা বন্ড ইস্যু করে বা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমি আবারো বলব, খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পুরোটা শুনেছেন, শোনার পর উনি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করছি এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে অংশীজন যারা আছেন তারা সবাই উপকৃত হবেন। দ্রুত আমরা পুঁজিবাজারে স্পষ্ট ও অর্থপূর্ণ সংস্কার দেখতে পারব এবং সবাই একটা গতিশীল পুঁজিবাজার দেখতে পারবেন।’