ঢাকা বুধবার, ১৪ই মে ২০২৫, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


হাজী সেলিমের পাশে নেই আ'লীগ ,সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা


৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৬:১৫

আপডেট:
৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৬:২৫

সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তার ছেলে যিনি নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যার হুমকির ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে নিয়ে যখন সংবাদমাধ্যমে আসছে নানা খবর, তখন পুরান ঢাকার একদল ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন- সব ‘অপবাদ’। তবে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ালীগের নেতাকর্মী কাউকেই দেখা যায়নি। তবে এসময় বেশির ভা্গ বিএনপি নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইরফান সেলিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ‘ব্যাহত হচ্ছে’ বলেও দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে ‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’ এর ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বিএনপির সহসভাপতি। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই নেতা। তিনি সেলিমেরে ডান হাত হিসেবে পরিচিত। অথচ এর আগে এই নেতা অভিযোগ করছেন, মামলার চাপ, পুলিশি হয়রানি এবং শারীরিক ও মানসিক চাপে রাজনীতি ছাড়ছেন তিনি।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী-সন্তানরা পুলিশি চাপে ও ভয়ভীতির কারণে আতঙ্কগ্রস্ত। এছাড়া তিনি নিজেও শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। এসব কারণে তিনি রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এই নেতা। গত ২৮ মার্চ একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন আবু মোতালেব।

তাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ও চকবাজার থানার সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি।

হাজী সেলিম ও তার পরিবারকে ঘিরে এই ঘটনাপ্রবাহে ‘গভীর দুঃখ’প্রকাশ করা হয় এই ব্যবসায়ী দলটির সংবাদ সম্মেলনে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বিএনপির সহসভাপতি ও সংগঠনের নেতা মোতালেব বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক পরিস্থিতি জানাতে এবং যানজট নিরসনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন তারা ডেকেছেন।

লিখিত ওই বক্তব্যের ছয়টি পয়েন্টের মধ্যে প্রথম তিনটিতে যানজট নিরসন, ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর না কাটা, প্যাকেজ ভ্যাটের হার কমানোর দাবি জানানো হয়। আরেকটি পয়েন্টে ময়লা পরিষ্কারের ফি কমানোয় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

মোতালেব বলেন, পুরাতন ঢাকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, যিনি সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন, বর্তমানে তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার, যেমন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াতে সম্প্রচার করা হচ্ছে; যাতে পুরাতন ঢাকার ব্যবসায়ীদের চলমান ব্যবসা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ সাংসদের বিরুদ্ধে যে সকল অপবাদ হচ্ছে, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়ীবৃন্দ হলফ করে ঘোষণা করছি যে, তিনি তিন তিনবার সংসদ সদস্য থাকাকালীন আমাদের কোনো ব্যবসায়িক সমিতি বা সংগঠনে অদ্যাবধি তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো অভিযোগ আজও আমরা পাইনি।

এদিকে,আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন হাজী সেলিম সব সময়ই ছিলেন সুবিধাবাদী। তিনি রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির ক্ষমতা ব্যবহার করে আধিপত্য বিস্তার করেছেন।দলীয় নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন,এক ঘরে করে রাখছেন । তিনি সব সময় নিজের সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করেছেন,আওয়ালীগ তৈরি করেন নাই।

গত রোববার রাতে ধানমণ্ডিতে হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে এসে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার পর সোমবার থানায় মামলা হয়।

সাংসদের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম এবং তিন কর্মচারীকে সেখানে আসামি করা হয়।

এরপর ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবী দাস লেইনে হাজী সেলিমের বাড়িতে সোমবার দিনভর অভিযান চালায় র‌্যাব। তল্লাশিতে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক ও ওয়াকিটকি পাওয়ায় কথা জানানো হয়।

এ সময় মাদক রাখায় ইরফানকে এক বছর এবং অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলাও করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ইরফানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মারধরের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।

এদিকে ইরফান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার এবং সাংসদ হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সেসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাংসদের মদিনা গ্রুপ ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘যেভাবে প্রচার’ চালানো হচ্ছে, তাতে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘গভীর আতঙ্কে’ রয়েছেন।

আবু মোতালেব বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তার (হাজী সেলিম) এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য মিডিয়া পরিবারকে সবিনয় অনুরোধ করছি।

মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন

উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে বিএনপি নেতা মীর শওকতের হাত ধরে রাজনীতিতে উত্থান হয় হাজী সেলিমের। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬৫ ও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন হাজী সেলিম। কিন্তু সে ইচ্ছাপূরণ না হওয়ায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি।