পানি বিক্রেতা থেকে গ্যাংস্টার হাজী সেলিম!

পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তার পরিবারের। তিনি যেন এ এলাকার অঘোষিত বাদশা। যেখানে চলে আসছিল এই পরিবারের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা।
পিতার দুই সংসারের দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান তিনি। অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা। অর্থভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি। কিশোর বয়সেই নামতে হয় উপার্জনে।
এক সময়ে ছিলেন পানবিক্রেতা। এখন তিনি দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়কে কাজে লাগিয়ে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের পান দোকানের ব্যবসায়ী থেকে হাজী মোহাম্মদ সেলিম হয়ে উঠেছেন বড় কনগ্লোমারেট মদিনা গ্রুপের মালিক।
ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের ব্যবসায়িক উত্থানের গল্পটিকে বলা চলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের কেস স্টাডি হিসেবে। গত তিন দশকে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলেরই পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার আগে হাজী সেলিমের বাবা চান মিয়া ছিলেন সোয়ারীঘাটের পানবিক্রেতা। পিতার সঙ্গে পান বিক্রির মধ্য দিয়ে ব্যবসার জগতে পা রাখেন হাজী সেলিম। স্বাধীনতার পরও পান বিক্রি করেই সংসার চলত পরিবারটির।পরবর্তী তিনি কুলীর কাজ করেন,হয়ে হঠেন ধীরে ধীরে কুলীর সরদার । একপর্যায়ে কোমলপানীয় সেভেন আপের এজেন্সি খুলে বসেন তারা। ওই এজেন্সির আড়ালে নকল কোমলপানীয় বিক্রির অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। সে সময় মোহাম্মদ সেলিম, তার বাবা চান মিয়া ও বড় ভাই কায়েস মিয়াকে পুলিশ আটকও করেছিল।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন নামে সিমেন্টের ব্যবসায় নামেন মোহাম্মদ সেলিম। শুরুর দিকে বাদামতলী থেকে জমাটবাঁধা সিমেন্ট এনে তা ক্র্যাশ করে বিক্রি করা হতো। একপর্যায়ে নিজেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সিমেন্ট কারখানা খুলে বসেন। কিন্তু সে সময়ে সিমেন্টের সঙ্গে বালি ও মাটি মিশিয়ে বাজারজাত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে তত্কালীন গণমাধ্যমগুলোয় বেশ লেখালেখিও হয়েছিল।
একপর্যায়ে বাদামতলী এলাকায় ফলের ব্যবসা শুরু করেন হাজী সেলিম। পরে বাদামতলী, ওয়াইজঘাট ও সদরঘাট এলাকার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে বিএনপি নেতা মীর শওকতের হাত ধরে রাজনীতিতে উত্থান হয় হাজী সেলিমের। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬৫ ও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন হাজী সেলিম। কিন্তু সে ইচ্ছাপূরণ না হওয়ায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। মনোনয়নও পেয়ে যান। লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন হাজী সেলিম। এরপর ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়া ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে তার ব্যবসা ও সম্পত্তির পরিমাণ। তার প্রতিষ্ঠিত মদিনা গ্রুপের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালের মধ্যেই গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত বার্ষিক টার্নওভার ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। পরের বছরগুলোয় এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে।
এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর জমি ও বাড়ি দখলের নেশা পেয়ে বসেছিল হাজী সেলিমকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই সময় হাজী সেলিম নিজ নিয়ন্ত্রণাধীন পাড়া-মহল্লাগুলোয় পঞ্চায়েত প্রথা চালু করেন। ওই সময় অনেকেই তার কাছে বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আসত। এর মধ্যে জমি বা বাড়িসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতেও তার সহযোগিতা চাইতে আসতেন স্থানীয়রা। কিন্তু এসব বিরোধ নিষ্পত্তির বদলে হাজী সেলিম নামমাত্র মূল্যে ওই জমির কাগজপত্র কিনে নিতেন। জোরপূর্বক উচ্ছেদের জন্য বিচার শেষে তিনি ঘরে বা দোকানে জোরপূর্বক তালা ঝুলিয়ে দিতেন। এজন্য এলাকায় ‘তালা হাজী’ নামেও খেতাব পেয়েছিলেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বুড়িগঙ্গার তীরে চাঁদনীঘাটে ওয়াসার পানির পাম্পের জমি দখল করে সেখানে পেট্রলপাম্প তৈরি করেন হাজী সেলিম। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন কামালবাগের জমির কাগজপত্র জালিয়াতির হোতা হিসেবে পরিচিত হাফেজ কামাল।
এছাড়া সোয়ারীঘাটে নদীতীর দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন চাঁদ সরদার কোল্ড স্টোরেজ। এরপর নবাববাড়ী এলাকায় জগন্নাথ কলেজের ছাত্রাবাস দখল করে সেখানে গুলশান আরা প্লাজা নামে বিশাল ভবন নির্মাণ করেন। আরমানিটোলা এলাকায় এক বৃদ্ধার সম্পত্তি দখল করে নির্মাণ করেন এমটিসি টাওয়ার। নলগোলায় ভাওয়াল রাজার সম্পত্তি দখল করে বিশাল ভবন নির্মাণ বরেন।
শুধু তা-ই নয়, হাজী সেলিম চকবাজারের ফ্রেন্ডশিপ মার্কেট ও জেলখানার পাশে ৫০-৬০ বছরের পুরনো ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সেখানে মদিনা আশিক টাওয়ার ও হাজী সেলিম টাওয়ার নামে দুটি বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করেন। মার্কেট নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নতুন দোকান দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই কোনো দোকান দেননি তিনি। এ কারণে দুই ব্যবসায়ী আত্মহত্যাও করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
তিনি যেন এ এলাকার অঘোষিত বাদশা। যেখানে চলে আসছিল এই পরিবারের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। নিজ বাড়ি ও ভবনে স্থাপন করা হয়েছিল টর্চার সেল। নিজস্ব বাহিনী দিয়ে এলাকায় জমি, বাড়ি ও মার্কেট দখল, জোরপূর্বক উচ্ছেদসহ চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির মতো গুরুতর শত শত অভিযোগ রয়েছে হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফানের বিরুদ্ধে।
ঝামেলাপূর্ণ জমি বা বাড়ি দেখলেই দখলের থাবা বসাতেন তারা। হাজী সেলিম নিজেই সেখানে গিয়ে নিজস্ব স্টাইলে বসাতেন সালিশ দরবার। এরপর বাড়ির মালিকদের তিন মাস বাইরে ভাড়ায় থেকে কষ্ট বোঝার কথা বলে ওইসব বাড়িতে নিজ হাতে তালা লাগিয়ে সবাইকে বের করে দিতেন হাজী সেলিম।
এ কারণে ধীরে ধীরে পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় ‘তালা হাজী’ হিসেবেও হাজী সেলিমের পরিচিতি গড়ে ওঠে।
এভাবেই হাজী সেলিম রাজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলী, নবাববাড়ী, আরমানিটোলা, মিটফোর্ড রোড, নবাবপুর রোড, ইমামগঞ্জ, ইসলামপুর, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, ফতুল্লা এলাকায় জমিজমার মালিক হন। এছাড়া একসময়ে খুলনার কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের সঙ্গেও ব্যবসা করেছেন হাজী সেলিম। এরশাদ শিকদারের সঙ্গেও প্রতারণা করেন হাজী সেলিম, মেরে দেন ব্যবসার টাকা। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হাজী সেলিমের।
২০০১ সালে বিএনপির নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর কাছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান হাজী সেলিম। বিএনপির ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদেশে গাঢাকা দেন তিনি। পরের নির্বাচনে আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি হাজী সেলিম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার জায়গায় মনোনয়ন পান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
ক্ষুব্ধ হাজী সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হাজী সেলিম। ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র পদে প্রার্থিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তিনি। মনোনয়ন পাওয়ার পর আবার একটু একটু করে কথা বলতে শুরু করেন। নির্বাচনে জয়লাভ করে আগের মতোই ক্ষমতার প্রদর্শন ও দখল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর বিরোধপূর্ণ ও সরকারি জায়গাজমি বা নদীতীর দখল করেই ক্ষান্ত হননি হাজী সেলিম। স্থানীয়রা বলছেন, যেখানেই চোখ পড়েছে হাজী সেলিমের, সেটাই দখল করে নিয়েছেন তিনি। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বসম্পন্ন নিদর্শনও। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে গত বছরও ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে পরিচিত চকবাজারের শতবর্ষেরও বেশি পুরনো জাহাজবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন হাজী সেলিম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, প্রায় দুই যুগ ধরে হাজী সেলিমের এই দখলবাজি চললেও কেউ কিছুই করতে পারেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ যাওয়ার পর জায়গা ছেড়ে দিতে প্রশাসন থেকে বারবার বলা হলেও কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি হাজী সেলিম। দুয়েকজন মুখ খুললেও তারা প্রতিনিয়ত জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
ক্ষমতাধর হওয়ার কারণেই হাজী সেলিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ করতে চায় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, হাজী সেলিম বা তার পরিবারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেননি। এলে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হতো। অপরাধ করলে সে যে-ই হোক, তাকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
এভাবেই রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পেশিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের সম্পদ বাড়িয়ে তুলেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় নামে-বেনামে হাজী সেলিম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অসংখ্য বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া পায়রা বন্দরসংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ভূসম্পত্তি কিনেছেন তিনি। হাজী সেলিমের পরিবারের এসব অবৈধ সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে ওই পরিবারের অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান। গতকাল তিনি জানান, সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফান সেলিমের অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব যদি দুদক আইনে তফসিলভুক্ত হয় তাহলে তা নিয়ে অনুসন্ধান করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন হাজী সেলিম সব সময়ই ছিলেন সুবিধাবাদী। তিনি রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির ক্ষমতা ব্যবহার করে আধিপত্য বিস্তার করেন। বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে প্রায় ১২০টি মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। খুন, খুনের চেষ্টা, নির্যাতন, চুরি এবং দুর্নীতি ও অবৈধ আয়ের কারণে এসব মামলা করা হয়। নিজের বিভিন্ন অপরাধে সবসময় সহায়তা পেয়েছেন সহধর্মিণী গুলশান আরার। ২০০৮ সালের এপ্রিলে ২৭ কোটি টাকা জ্ঞাতবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য ১৩ বছরের জেল হয় সেলিমের। আর সেই সম্পদ নিজের কাছে রাখার জন্য তিন বছরের জেল হয় তার স্ত্রী গুলশান আরার। ফলে ২০০৮ সালে হাজী সেলিম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ফলে সেই সময়ে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও মামলার কারণে নির্বাচন কমিশন তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে। ২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এসময় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন হাজী সেলিম। পরে নিজের অবস্থান জানান দিতেই ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু এবারও দলের সিদ্ধান্ত যায় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের পক্ষে। কিন্তু দলের নির্দেশ না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন হাজী সেলিম। মহিউদ্দিনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন তিনি, যা বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিব্রত করে। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। সেই সময়ে ‘স্বতন্ত্র এমপি জোট’ নামে একটি স্বতন্ত্র এমপিদের দিয়ে তিনি একটি জোটও গঠন করেন। এরপর তিনি হারান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদটি। পরে ২০১৮ সালে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এই সংসদ সদস্য। পরে ঢাকা-৭ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে হারান তিনি। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমকে ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলর’ পদে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানেও ছেলেকে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ বানিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজে এমপি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেলেকে বিজয়ী করেছেন হাজী সেলিম।
এদিকে, হাজী সেলিমের ছেলে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য গত নির্বাচনের আগে একাধিকবার চকবাজার এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শহীদ হাজী আব্দুল আলিম খেলার মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটান ইরফান সেলিম। সেদিন মূলত ছিল নিজেকে জানান দেওয়ার শো ডাউন। ওই অনুষ্ঠানে তৎকালিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রধান অতিথি ছিলেন। মাঠের নামফলকে হাজী সেলিমের নাম না থাকায় তার ছেলে ইরফান সেলিম দলবল নিয়ে হাজির হন সেখানে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে থাপ্পড় মারেন হাজী সেলিম।
এভাবে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্থান হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের। পুরান ঢাকার বিশেষ করে চকবাজার এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরফান সেলিম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে পিতার আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরমও তুলেছিলেন ইরফান। পরে আওয়ামী লীগ থেকে হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। এমপি হতে না পারলেও জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন থেকেই যায় তার। তাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন ইরফান সেলিম। বাবা এমপি অন্যদিকে শ্বশুর ইকরামুল করিম চৌধুরীও একজন সংসদ সদস্য। আর নিজে কাউন্সিলর। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতেন ইরফান সেলিম।এদিকে, হাজী সেলিমের ছেলে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য গত নির্বাচনের আগে একাধিকবার চকবাজার এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শহীদ হাজী আব্দুল আলিম খেলার মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটান ইরফান সেলিম। সেদিন মূলত ছিল নিজেকে জানান দেওয়ার শো ডাউন। ওই অনুষ্ঠানে তৎকালিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রধান অতিথি ছিলেন। মাঠের নামফলকে হাজী সেলিমের নাম না থাকায় তার ছেলে ইরফান সেলিম দলবল নিয়ে হাজির হন সেখানে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে থাপ্পড় মারেন হাজী সেলিম।
এভাবে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্থান হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের। পুরান ঢাকার বিশেষ করে চকবাজার এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরফান সেলিম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে পিতার আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরমও তুলেছিলেন ইরফান। পরে আওয়ামী লীগ থেকে হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। এমপি হতে না পারলেও জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন থেকেই যায় তার। তাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন ইরফান সেলিম। বাবা এমপি অন্যদিকে শ্বশুর ইকরামুল করিম চৌধুরীও একজন সংসদ সদস্য। আর নিজে কাউন্সিলর। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতেন ইরফান সেলিম।
এছাড়া দখলি সম্পত্তিগুলো দুদক আইনের আওতাভুক্ত হলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে নিজের ব্যবসাকেও সম্প্রসারণ করেছেন তিনি। তার মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের অধীনে রয়েছে মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, মদিনা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, মদিনা পলি ফাইবার লিমিটেড, মদিনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড, মদিনা মেরিটাইম লিমিটেড, মদিনা কিচেন সিংক, মদিনা ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, মদিনা পলিমার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, মদিনা লজিস্টিকস অ্যান্ড শিপিং লিমিটেড, মদিনা ফিলিং সার্ভিসেস লিমিটেড, মদিনা পাম্প অ্যান্ড ফাউন্ড্রি, মদিনা হিমাগার, মদিনা ফ্রুটস লিমিটেড, ফ্লিট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বিছমিল্লাহ নেভিগেশন, এমএমআর (বাংলাদেশ), চাঁদ সরদার কোল্ড স্টোরেজ, টাইগার সিমেন্ট ইত্যাদিসহ মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান।