জামাত-বিএনপি’র নিয়ন্ত্রনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বহির্গমন শাখা

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের একটি মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য হলো প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ। রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দেশের সকল অঞ্চল হতে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল অভিবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিত করা।
এটি প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে ২০শে ডিসেম্বর-২০০১ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল করার লক্ষ্যে দেশের সকল অঞ্চল হতে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল অভিবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই মূলত এই মন্ত্রণালয় কাজ করে থাকে।
এছাড়াও এই মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাংলাদেশী এবং প্রবাসী কর্মীদের তথ্য, সহযোগিতা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
আমাদের দিনের অনুসমন্ধানে জানা যায়, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সীর ষড়যন্ত্রে উক্ত মন্ত্রণালয়ের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ায় প্রকৃত ব্যবসায়ীগণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশীম খাচ্ছে। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিএমইটি (ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার ইমপ্লয়মেন্ট এন্ড ট্রেইনিং) যেকোন বিদেশ গমনেচ্ছুক কর্মীর ভিসা প্রাপ্তির পর বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্টকার্ড) বিএমইটি প্রদান করে থাকে।
ভিসা সঠিক থাকার পরেও বিভিন্ন অজুহাতে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টি করে ফাইল আটকিয়ে রাখা হয়। কর্মকর্তাদের মনোনীত প্রতিনিধি ব্যতিরেকে উক্ত ফাইল ছাড় করানো সম্ভবপর হয়ে উঠে না। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে, একজন প্রভাবশালী ডেপুটি ডিরেক্টরের ছত্রছায়ায় কর্মকর্তাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
আমাদের দিন এর অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,, ‘স’ নামের অধ্যাক্ষরের ঐ ডেপুটি ডিরেক্টর এর কথায় সেকশন থেকে শুরু করে এডি ও অন্যান্য ডিডিগণ পরিচালিত হয়ে আসছে। উক্ত ডিডি ছাত্রজীবনে বর্তমান সরকার বিরোধী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকায় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পায়তারা করছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে উক্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সর্বেচ্চ রেকর্ড সংখ্যক দশ লক্ষের অধিক কর্মী বিদেশে গমন করেন। ২০১৮ সালে প্রায় নয় লক্ষ কর্মী বিদেশ গমন করেন। কিন্তু সরকারের ৩য় মেয়াদের প্রথম বৎসরে প্রায় ছয় লক্ষ কর্মী বিদেশ গমন করেন। যাহা অন্যান্য বৎসরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে পড়েছে।
অনতিবিলম্বে অসাধু কর্মকর্তাদের লাগাম টেনে না ধরলে সরকারের আয়ের সর্বোচ্চ স্তম্ভ অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়বে বলে প্রতিয়মান হয়। তবে এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।
প্রবাসী শ্রম বাজার বিশ্লেষকগণ দাবী করেন যে, প্রচলিত শ্রম বাজার টিকিয়ে রাখাসহ নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্তমান মন্ত্রী ইমরান আহম্মেদ উল্লেখযোগ্য কোন পারফর্মেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করতে তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন।
বরং যেসব দেশ ও নিয়োগকর্তা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করতেন বিভিন্ন কারণে একে একে সেইসব বাজার বন্ধের উপক্রম প্রায়। অথচ কোন রিক্রুটিং এজেন্সীর মালিকগণ নতুন কোন দেশের বাজার সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু করলে আমলাতান্ত্রিক বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়।
প্রকৃত রিক্রুটিং এজেন্সীগুলো এহেন অবস্থাতেও নিজেদের ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ থাকে যে, ১৫-০১-২০২০ ইং তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় “বিদেশ গমনেচ্ছুরা গলদঘর্ম” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো প্রতিদিন কয়েক হাজার কর্মীর জন্য একজন আরবী অনুবাদককে (ফসিউল) দিয়ে চলছে পুরো বহির্গমন শাখা। সুতরাং ফাইলের স্তুপ পড়ে থাকাই স্বাভাবিক। সচিব সেলিম রেজা বহির্গমনের ডিজি সামশুল আলমকে অতিঃ অনুবাদক নিয়োগের ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরবর্তীতে এর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায় বহির্গমন শাখার কর্মকর্তাদের অনিহাই এর মূল কারণ। বর্তমান একমাত্র অনুবাদক উক্ত কর্মকর্তাদের এজেন্ট বাস্তবায়ন করার মূল কারিগর। নতুন অনুবাদক নিয়োগ হলে তাদের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে মর্মে প্রতিয়মান হয়। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন-“বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় সোয়া কোটি বাংলাদেশী কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন অন্যদিকে অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।”