ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১


কামাল আউট, তারেক ইন


১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৯

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নেতাদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সাক্ষাৎকার চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। আর এই সাক্ষাৎকার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।


যে কারণে এখন সবার মনে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব ছিনতাই হয়ে গেল? ড. কামাল হোসেনকে সরিয়ে ফ্রন্টের মূল নেতা হিসেবে কি আবির্ভূত হলেন তারেক রহমান?

জানা গেছে, লন্ডন থেকে তারেক রহমান জানিয়েছেন, ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কারা কারা নির্বাচন করবে, তা চূড়ান্ত করবেন তিনিই।



অথচ কয়েকদিন আগে মাতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সবাই একমত হয়েছিল, শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেয়ার ঘোষণার পরপরই পাল্টে যেত থাকে দৃশ্যপট। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন তারেক রহমান।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার আগের দিন রাতে ঐক্যফ্রন্টের সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এসময় বৈঠকে উপস্থিত গণফোরাম ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের কোনো শরিকই এর প্রতিবাদ করেননি। যার ফলে সেদিনই নিশ্চিত হয়ে যায় যদি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী যেই হোক না কেন আসল নেতা হবেন তারেক রহমান।

সেদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০ দলের শরিক এবং ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চাহিদার তালিকা তার কাছে দেয়ার জন্য বলেন। এই তালিকা থেকে তারেক রহমানই ঠিক করবেন ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বরাবরই সাংবাদিকদের সামনে বলে আসছেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘দলীয়ভাবে বিএনপি আমাদের জোটে আছে। এটা শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি জোট। এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তারেক রহমানের মন্তব্য, ‘আমার টাকায় কিনা গোলাম কামাল হোসেন সাহেব। এখন থেকে আমি যে ভাবে বলি সে ভাবেই কাজ করবেন তিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে ওই সরকারের প্রথম কাজ হবে তারেককে দেশে ফেরানো। এবং তার মামলা প্রত্যাহারসহ তাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো। এই কাজ সম্পন্ন হলেই ঐক্যফ্রন্টকে ‘গলা ধাক্কা’ দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করছেন ওইসব নেতারা।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মূল আপত্তির জায়গা ছিল তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে নির্বাচন করলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবনের দুর্নীতি সবার সামনে আসবে। তারেক এবং তার বন্ধুদের অপকর্মের চর্চা হবে। এই প্রেক্ষাপটেই ড. কামাল হোসেনকে সামনে আনা হয়েছে।

সবাইকে দেখানো হচ্ছে, তারেক এবং জিয়া পরিবারের অধ্যায় শেষ। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন বিএনপি আত্মপ্রকাশ করেছে। যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। কিন্তু হঠাৎ করেই দলের কর্তৃত্ব ফের জিয়া পরিবারের হাতেই চলে এসেছে। এখন নাকি তার নির্দেশেই চলবে ঐক্যফ্রন্ট।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল বাইরে নীরব থাকলেও ভেতরে কিন্তু তিনিও লজ্জায় পড়েছেন। কারণ, তারেক রহমান এখনই যে তাকে আংকেল থেকে কামাল সাহেব ডাকতে শুরু করেছেন।