ঢাকা সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২


রূপগঞ্জে অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম

না’গঞ্জে ১০ দিনে ১১ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন


১৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:১২

আপডেট:
১২ মে ২০২৫ ০৩:৪৭

অভিযানে নেতৃত্ব দেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম

আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকার পরও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় অবাধে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। সম্প্রতি এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মাঠে নেমেছে তিতাস। গত ৪ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে ১১ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের দায়ে রূপগঞ্জে পাঁচজনকে জেল-জরিমানা করেন আদালত। এছাড়া বন্দরে নয়জনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পাতিবার মামলা দায়ের করেছে তিতাস।রূপগঞ্জে অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম
জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর রূপগঞ্জে পাঁচ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্যাস বিচ্ছিন্ন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া একটি বেকারি, কয়েল কারখানা ও রেস্টুরেন্টেরও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার তারাব পৌরসভার মৈকুলী এলাকায় অবৈধভাবে নেয়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এতে ছয়টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম। এ সময় সরকারি কাজে বাধা ও অবৈধ গ্যাস সংযোগের দায়ে পাঁচজনকে জেল-জরিমানা করেন আদালত।
তিতাস গ্যাসের জোবিঅ সোনারগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাফরুল আলম জানান, তিতাস গ্যাসের নিয়মিত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গত বুধবার দুপুরে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসংলগ্ন মৈকুলী এলাকায় যান। এ সময় অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ তিতাস গ্যাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধা দেয় এবং তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে অবৈধভাবে নেয়া তিতাস গ্যাসের বিতরণ লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এতে খাদুন, মৈকুলী, খিদিরপুর, নয়াপাড়া, বড়ভিটা, আরাফাতনগড় গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এছাড়া সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় মৈকুলী এলাকার আলেক ভূঁইয়ার ছেলে রিপনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগে মহান তৃপ্তি বেকারির সালাউদ্দিনকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেল, মনির হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেল, কয়েল কারখানার আরিফকে ৫০ হাজার টাকা অনাদায়ে এক মাসের জেল ও খাবার হোটেলের মুসাকে ২৫ হাজার টাকা অনাদায়ে ১৫ দিনের জেল দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে গত ৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দরে অভিযান চালিয়ে দু’টি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলার বন্দর ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের এই গ্যাস সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়। একই সাথে তিতাস গ্যাসের ওই পাইপলাইনগুলো থেকে যাতে আবার অবৈধ সংযোগ নেয়া না যায় সেজন্য সেগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার বলেন, ৪ নভেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দুটি ইউনিয়নের সাড়ে ছয় হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুটি ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় অবৈধভাবে পাইপলাইন বসিয়ে সংযোগ নেয়া হয়েছিল।
এদিকে বন্দরে অবৈধ গ্যাস চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তিতাস গ্যাস টি অ্যান্ড ডি কোম্পানির সোনারগাঁও আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো: জাফরুল আলম বাদি হয়ে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বন্দরের বাগবাড়ি এলাকার ইব্রাহীম মিয়ার ছেলে রমজান, পূর্ব কুশিয়ারা এলাকার মনু মিস্ত্রির ছেলে জামান মাস্টার, সামসুল হক, রিয়াজুল হক সাধু, সাইদুর রহমান, সালাম মেম্বার, রহিম মেম্বার, মিনহাজ, মঞ্জুর রহমানসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি সংযোগ দিতে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ৭০-৮০ হাজার টাকা করে নেয় বলে তারা অভিযোগ করেন। তিতাস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪-৫ বছর ধরে এ অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করে যাচ্ছে গ্রামের মানুষ। এর ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পথে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সবচেয়ে বড় বাধা বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সংসদ সদস্যদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানায় মন্ত্রণালয়। তবে কমিটি বলেছে, সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতার চাপ আমলে নিলে চলবে না। অবশ্যই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।