অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে বিয়ে
চার বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ উল্লাপাড়ার মেয়র

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম মাত্র চার বছরের ব্যবধানে তিন বিঘা জমিসহ পাঁচ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ব্যবসায়ী রাজন আহমেদের স্ত্রী, সহকারী শিক্ষিকা গুলশানারা পারভীন পান্নাকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করার ঘটনায় তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
পৌরসভাসহ বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলাফেরা করেন। ভয়ে পৌরসভার কাউন্সিলররা মুখ খুলতে সাহস পান না। একসময় অভাব থাকলেও বর্তমানে তার চাল-চলন, আচার-আচরণে রাজকীয় ভাব দেখে বিস্মিত উল্লাপাড়ার মানুষ।
পৌর এলাকায় নানা প্রকল্প, ২০১৫-১৬ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি থেকে মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দির ও শশ্মানের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। সূত্র মতে, অক্টোবরে মেয়র নজরুল ইসলামের দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এলে তদন্তের স্বার্থে দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে মেয়রের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির রেকর্ড পাঠাতে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ঘটনাটি উল্লাপাড়া উপজেলা জুড়ে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে উল্লাপাড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নজরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরের মধ্যে দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
এলাকাবাসী জানান, উন্নয়ন খাতের অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। পৌরসভার আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। কাউন্সিলরের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা না করে একাই সব কাজ করেন। চার বছর আগে সাধারণ জীবনযাপন করলেও বর্তমানে বিলাসবহুল গাড়িতে চড়েন, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত জমিতে গড়ে তুলছেন নানা প্রকল্প, ঢাকায় কিনেছেন প্লট, চার বছরে নিজ পরিবারের নামে-বেনামে কিনেছেন অসংখ্য জায়গা-জমি ও ফ্ল্যাট। যুক্ত হয়েছেন পরিবহন ব্যবসায়। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নজরুল ইসলামের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সব কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করে পৌরসভাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। পৌরসভার রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ তিনি গোপনে দরপত্র করে নিজের লাইসেন্স ছোটভাই বা অনুগত ঠিকাদারদের দিয়ে নিম্নমানের কাজ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়েই মেয়র নজরুল ইসলাম ২০১৭ সালের ১৬ মে উল্লাপাড়া উপজেলার বাখুয়া মৌজায় আব্দুল জলিল সরকারের প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের জমি সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য গোপন দলিলে এক কোটি টাকায় ক্রয় দেখিয়েছেন। একই বছরের ১১ জুলাই আব্দুল হান্নান সরকারের কাছ থেকে বাখুয়া মৌজায় তার প্রথম স্ত্রী জেসমিন আরার নামে ৪৩ একর জায়গা ১০ লাখ টাকা মূল্যে ক্রয় করেন। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৯ সালের ২৫ জুন বাখুয়া মৌজায় আশরাফ আলীর কাছ থেকে পাঁচ শতক জায়গা তার বাবা চাঁদ আলীর নামে ২০ লাখ টাকা মূল্যে ক্রয় করেন। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান জানান, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের যে রেকর্ডপত্রসহ নির্বাচনি হলফনামা চাওয়া হয়েছিল তা ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, এডিপির বরাদ্দে কিছু সমস্যা হয়। তবে বরাদ্দকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুদানের অর্থ দেওয়া হয়েছে। মসজিদ, মন্দিরের নামে বরাদ্দকৃত টাকা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পায়নি এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নই। দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে তিনি বলেন, গুলশানারা পারভীন পান্না আমার স্ত্রী। তাকে নিয়েই আমি ঘর-সংসার করছি।