ঢাকা বুধবার, ১৪ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


প্রবেশে নয়, অনুপ্রবেশে বাধা দেবে আ.লী


৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:১৩

আপডেট:
১৪ মে ২০২৫ ০৩:২৪

অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের বাদ দেওয়া হবেÑ তাই একটি তালিকাও করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে যেকোনো দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা যাবে এমন ঘোষণাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা  বলেছেন, আওয়ামী লীগ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দেওয়া হলেও অন্য কোনো দল থেকে কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চাইলে তাদের জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্তও আছে। তবে এ ধরনের বক্তব্য অনুপ্রবেশকারী হঠাতে জটিলতা তৈরি করবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের এ উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তাদের কাছে অনুপ্রবেশকারী ও প্রবেশ দুটি শব্দ আলাদা। কোনো কোনো নেতার মতে, অনুপ্রবেশকারী শব্দটি অপ্রাসঙ্গিকও।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান কে বলেন, আওয়ামী লীগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন দল থেকে সৎ রাজনীতিকরা আসতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গত ১০ বছরে মতলববাজ ছাড়া কারা আওয়ামী লীগে এসেছে?

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, অনুপ্রবেশকারী এক জিনিস। যারা বিনা অনুমতি নিয়ে অনিয়ম করে দলে ভেড়ে। তবে গাইডলাইন মেনে অন্য দল থেকে কেউ আওয়ামী লীগে এলে তা অনুপ্রবেশকারী হয় না। তারা প্রবেশের অনুমতি নিয়েই আসে। আওয়ামী লীগ তাদের জায়গা দেবে। গত শনিবার ঢাকার বাইরে একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্য দল থেকে ক্লিন ইমেজের কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চাইলে তাকে নেওয়া হবে দলে। তার এ বক্তব্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দেখছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক একটি অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। সেখানে আমার কিছু বলার নাই। সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আসলে খুব একটা কিছু করার নেই। হাঁকডাকই যা!

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে কেউ যোগ দিতে চাইলে নেওয়া হবে তাকে। তাহলে অনুপ্রবেশকারীর তালিকা কেন এই প্রশ্নে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী ও প্রবেশকারী দুটো আলাদা শব্দ। দুটি শব্দের আলাদা গুরুত্বও আছে। অনুপ্রবেশকারী হলো নিজস্ব মতলব হাসিল করতে গিয়ে যারা দলে ঢুকে বিভিন্ন সুবিধা নেয় তারা। তাদের খপ্পরে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদেরই অনুপ্রবেশকারী বলা হয় এবং তাদের দল থেকে বের করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবেশ মানে দলে যোগ দেওয়া। আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে আনুগত্য প্রকাশ করে আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ করার আগ্রহে অন্য কোনো দলের নেতা আমাদের দলে আসতে চাইলে ওই নেতাকে আমরা দলে নেব। তারা অনুপ্রবেশকারী নয়, তারা প্রবেশকারী।

প্রবেশের সুযোগ রেখে অনুপ্রবেশকারী হঠানোর উদ্যোগ কতটা সফল হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে অনুপ্রবেশকারী মানে নিজস্ব মতলব নিয়ে যারা দলে ঢুকে আওয়ামী লীগের বদনাম করছে তারা। সুতরাং তাদের আওয়ামী লীগ থেকে বের করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য দলের অনেক ক্লিন ইমেজধারী নেতা রয়েছে তারা আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ করতে আসতে চাইলে তাদের আমরা কেন নেব না? রাজনীতি করার অধিকার সবারই আছে। এ ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের হঠানোর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে না।

আওয়ামী লীগের অন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সারা দেশে যে তালিকা করেছে সে অনুযায়ী সবাই বাদ যাবে এ ধারণা ঠিক নয়। তিনি বলেন, এই তালিকা তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা তালিকা দেখে যাচাই-বাছাই করে সুনির্দিষ্টভাবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাবে শুধু তাদেরই বাদ দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগে যোগদানের একটি গাইডলাইন আছে। যেমন যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দল ও সংগঠনের কাউকে আওয়ামী লীগে নেওয়া যাবে না। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, সন্ত্রাস-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ আছে তারাও আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না। হানিফ বলেন, সৎ ও ক্লিন ইমেজের যে কেউ চাইলে আওয়ামী লীগে আসতে পারবে। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী শব্দটিই আসলে অপ্রাসঙ্গিক। যারা বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে তারা আওয়ামী লীগেরই কোনো না কোনো নেতার হাত ধরে এসেছে। তবে এ সুযোগ নিয়ে জি কে শামীমের মতো লোকেরা দলে ভিড়েছে। তাদেরই বাদ দেওয়া হবে। হানিফ বলেন, গত দশ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে অনেকেরই আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা বেড়েছে। তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিতেই পারে।